Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাঁচ মাসে চলন্ত বাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৫টি, নিহত ১

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০১৯, ১২:৪৫ PM
আপডেট: ০৮ মে ২০১৯, ১২:৪৫ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


মামলা চচ্ছে, বিচার হচ্ছে তবুও থামছে না দেশের বিভিন্ন স্থানে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা। গত ৫ মাসে চলন্ত বাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৫টি, নিহত ১। এ ঘটনার প্রতিরোধে ১০টি করণীয় নির্ধারণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলন্ত বাসে ধর্ষণ প্রতিরোধে যা করণীয় : ১. নারীদের বাসে একক যাত্রী হয়ে ভ্রমণ পরিহার, ২. ভ্রমণে সতর্ক থাকা (যাত্রীবেশে অপরাধী ও পরিবহন কর্মীদের প্রতারণার ফাঁদ থাকে); ৩. রাতের বেলায় ভ্রমণে যাতায়াতের পথ, পরিবহন ও রাস্তার নিরাপত্তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া ৪. প্রচলিত আইনে প্রদত্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষার অধিকার যথাযথ প্রয়োগ (দÐবিধি ১৮৬০-এর ১০০(৩য়) অনুযায়ী, ধর্ষণের অভিপ্রায়ে আক্রমণকারীর প্রয়োজনে মৃত্যু ঘটানো যেতে পারে) ৫. আক্রান্ত হলে সাহায্যের জন্য জোরে চিৎকার ও জাতীয় হেল্প সেন্টারে (৯৯৯) কল ৬. রাতের বেলায় সড়কে পুলিশের নিয়মিত টহল ও নজরদারি বাড়ানো ৭. বাসের জানালায় স্বচ্ছ প্লাস লাগানোর বিধান ৮. অপরাধ সংঘটনকালীন তা প্রতিরোধে জনসাধারণের সক্রিয় ভূমিকা পালন ৯. পরিবহন কর্মীদের নিয়ে অপরাধবিষয়ক মাসিক সচেতনমূলক প্রোগ্রাম ১০. অপরাধীর দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত ও সম্ভাব্য অপরাধীদের কাছে তা প্রচার করা জরুরি।

গতকাল ৭ মে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে স্বর্ণলতা যাত্রীবাহী বাসে শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৪) নামের এক নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার করে। ধর্ষণকারীরা তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাসিন্দা।

১৩ এপ্রিল চলন্ত বাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও প্রতিরোধ করলে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাস শনাক্ত ও জব্দ করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। ঘটনার পরে নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে বাসচালক বিপ্লব দেবনাথকেও (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে চলন্ত বাসে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের চেষ্টাকারীসহ গাড়ির চালক ও হেলপারকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় রজনীগন্ধা পরিবহনে এ ঘটনাটি ঘটে।

১৯ জানুয়ারি সাভারে যাত্রীবাহী বাসে এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে সঙ্গে থাকা মালামাল লুটে নিয়ে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়েছে ছিনতাইকারীরা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংকটাউন ব্রিজের কাছে এ ঘটনা ঘটে। বাসটি আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার শিকার দম্পতি ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কানারচর কদমতলী এলাকার মোনায়েম হোসেনের ছেলে মো. হাসান (২৭) ও তার স্ত্রী মহুয়া আক্তার (২১)।

৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় চলন্ত বাসে এক তরুণীকে শ্লীলতাহানি ও সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বাসের চালক ও হেলপারের হাত থেকে নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েন ওই তরুণী। এতে গুরতির আহত হন তিনি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের পাইকারি কাঁচাবাজার এলাকার সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

২০১২ সালে চলন্ত বাসে প্যারামেডিকেল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলন্ত বাসে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার ২০টি ঘটনা ঘটনা ঘটেছে।

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ২০১৩ সালে দুটি, ২০১৫ সালে চারটি, ২০১৬ সালে তিনটি, ২০১৭ সালে ছয়টি এবং ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচটি ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। স্থান বিশ্নেষণে দেখা যায়, ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি (ছয়টি) এমন অপরাধ ঘটেছে। পরে যথাক্রমে টাঙ্গাইলে চারটি, ময়মনসিংহে দুটি, চট্টগ্রামে দুটি, বরিশাল, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নোয়াখালীতে একটি করে ঘটনা ঘটেছে। অর্ধেক ঘটনাই মহাসড়কে, ২৫ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে এবং ২৫ শতাংশ রাজধানী বা নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

অপরাধ সংঘটনকারীদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং কিছু সংখ্যক ৩৬ বা তদূর্ধ্ব মধ্যবয়সী। অধিকাংশ ঘটনায় কেবল কোনো একটি নির্দিষ্ট পরিবহন কর্মীরা যেমন ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও সহযোগীরা জড়িত ছিলো।

২০১৪ সালে ১৪ ফেব্রেুয়ারি মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণ মামলায় বাস চালক দিপু মিয়া ও হেলপার আবুল কাশেম নামে দু’জনকে যাবজ্জীবন দিয়েছে আদালত। ২০১৭ সালে চলন্ত বাসে রূপা ধর্ষণ পাঁচ আসামীর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড আর একজনের সাত বছরের কারাদ দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে যে বাসে রূপাকে ধর্ষণ করেছে সেই বাসের মালিকানা রূপার পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়।

Bootstrap Image Preview