একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে, অথচ আমাদেরকে অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কিন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর কোন ব্যবস্থায় গ্রহণ করছে না। তাহলে আমরা চুনোপুঁটি বলেই কি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি চুনোপুঁটি না হতাম তবে আমাদেরকে যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে, তাদের অবশ্যই আইন শৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, আমরা কি দেখতে পাই প্রধানমন্ত্রীকে কেউ কোন কটূক্তি করার সঙ্গে সঙ্গে অজপাড়া গ্রাম থেকেও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।
অথচ আমাদের মত চুনোপুঁটি মানুষদের হত্যার হুমকি দেওয়ার পর কার্যত কোন ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক। এটা কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। আমরাও তো মানুষ? সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছাড়ানোর অপচেষ্টায় এসব হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, আমার মত যারা মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক কথা বলে বিশেষ করে মামুন, জাফর ইকবাল, সুলতানা কামাল ছাড়াও এমন ১৫০ লোককে হত্যার হুমকি প্রতিনিয়তই দেওয়া হচ্ছে।
তারপরও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তত্ত্ববাধায়ক সরকারের সময় দু-তিন মাস মামুনকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল, তারপর আর কোন ব্যবস্থায় নেই। আমাদের নিরপত্তার জন্য।
আমি চিন্তিত, সত্যি সত্যি কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব কেউ বিষয়টা ভালো ভাবে নিবে না। এটা দেশের ভাবমূর্তিকে আরও সংকটে ফেলে দিবে। বিশেষ করে হুমায়ন আজাদের উপর হামলাসহ অসংখ্য ব্লগার হত্যা কিন্তু ইতোমধ্যে সংকট সৃষ্টি করেছে এ বিষয়টা সরকারকে বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, হুমায়ন আজাদের মৃত্যুর জন্য মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী দায়ী। অথচ সাঈদীর কোন বিচার হল না। তার ওয়াজে সুস্পষ্ট ভাবে হুমায়ন আজাদের বিষয়ে কুৎসা করা হয়েছে।
এবং দুষ্কৃতিকারীরা তার ওয়াজ শুনে অনুপ্রাণিত হয়েই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমি একটি কথা খোলামেলা ভাবেই বলতে চাই, আইএস, আলকায়দা, জামায়াতে ইসলাম সব একই সূত্রে গাঁথা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। এরা জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী।
বাংলাদেশে জঙ্গি দমন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু জঙ্গিবাদীতা কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। অর্থাৎ প্রচার প্রচারণা ও এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর প্রপাগান্ডা কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনবরত প্রচারণা চালচ্ছে অসাম্প্রদায়িক মানুষকে হত্যার হুমকি দিয়ে। এসব বন্ধ না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে। এই বিষয়টার উপর জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধর্মান্ধা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবেই মোকাবেলা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা সমর্থিত বাংলা সাময়িকী ‘লোন উলফ’ এর মার্চ সংখ্যায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ।
ওই সাময়িকীতে বলা হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ইসলামের স্বার্থে হত্যা করা হবে। এছাড়াও গত বছরের মার্চে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর ‘লোন উলফ’ হামলা করা হয়েছিল।