Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধর্ষণের পর মাথা থেঁতলে হত্যাকরা হয় তানিয়াকে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০১৯, ১০:৫৫ AM
আপডেট: ০৯ মে ২০১৯, ১০:৫৫ AM

bdmorning Image Preview


কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে স্বর্ণলতা পরিবহনের চলন্ত বাসে ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স (সেবিকা) শাহীনূর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষকরা তাঁকে খুন করার জন্য মাথার পেছনে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে। এতে তানিয়ার মাথার খুলি আলাদা হয়ে যায়। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

এদিকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালাতে চেয়েছে দুর্বৃত্তরা। লোক দেখানো চিকিৎসার জন্য দুর্বৃত্তরা মুমূর্ষুপ্রায় তানিয়াকে পিরিজপুর বাজারের যে ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বাজিতপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় আটক পাঁচ আসামিকেই আদালত আট দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।

তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলো বাসচালক গাজীপুরের কাপাসিয়ার মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে নূরুজ্জামান ওরফে নূর মিয়া ও হেলপার একই এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে লালন মিয়া, তাদের সহকারী ভেঙ্গুরদি গ্রামের অহিদুজ্জামানের ছেলে আল-আমিন এবং বাজিতপুরের পিরিজপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

পুলিশ এ ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত চালক ও হেলপার ছাড়াও কাপাসিয়ার লোহাদি গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক, কটিয়াদীর ভোগপাড়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া ও বাজিতপুরের পিরিজপুর গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল তাদের কিশোরগঞ্জ আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সারোয়ার জাহান আবেদনে উল্লেখ করেন, ওই পাঁচজন মিলে তানিয়াকে বাসের ভেতর পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। এসব অপরাধের কথা তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতার এবং স্বর্ণলতা পরিবহনের বাসটি উদ্ধারের জন্য গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আল মামুন আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়েছেন যে মেয়েটিকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপর ভারী বস্তু দিয়ে মাথার পেছন দিকে সজোরে আঘাত করা হয়। এতে মাথার পেছন দিকের খুলি অনেকটা আলাদা হয়ে যায়। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটি অতি দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে তানিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে তানিয়ার মৃত্যুর আলামত পাওয়া যায়। এ ছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

এদিকে গ্রেফতার হওয়ার পর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ মঙ্গলবার কটিয়াদী থানায় অবস্থানকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে বাসের চালক ও হেলপার তাঁকে জানিয়েছে যে বাসের সব যাত্রী নেমে পড়লে বাসের একমাত্র যাত্রী ছিলেন মেয়েটি। বাসটি বিলপাড় গজারিয়া এলাকায় যাওয়ামাত্র মেয়েটি ভয় পেয়ে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে আহত হন। অবশ্য চালক ও হেলপারের বক্তব্যের সূত্র ধরে পুলিশ সুপার মন্তব্য করেন—এমনি এমনি কেউ ভয় পেয়ে বাস থেকে লাফ দেয় না। এদিকে মামলায় পিরিজপুরের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির শিক্ষিত যুবক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আসামি করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যক্তি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিরপরাধ কাউকে এভাবে আসামি করলে মামলাটি দুর্বল হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে এমন নৃশংস ঘটনার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হবে।’

মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এটা অন্যায়ভাবে আমাকে ফাঁসানোর নিকৃষ্ট প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। আমি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই এবং ষড়যন্ত্রকারী মহলের শাস্তি চাই।’

তবে বাজিতপুর থানার ওসি খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘বাদী যেভাবে মামলা দিয়েছেন আমরা ঠিক সেভাবেই মামলাটি রেকর্ড করেছি। ঘটনাটির নিবিড় তদন্ত করছে পুলিশ।’

মামলার বাদী তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন চালক ও হেলপারসহ তিন আসামির নাম বলতে পারলেও কালের কণ্ঠ’র কাছে চতুর্থ আসামির নাম বলতে পারেননি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেডা জানে হে (ছেলে) কী করছে!’   

Bootstrap Image Preview