পাবনা আমিনপুরের ত্রিমোহনী গ্রামে পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের দাবিতে ফজিয়া আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভিকটিমের ননদ সামেলা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোরের দিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ির উঠানের ওপর ফেলে ওই গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানা যায়। ভিকটিমের ফজিয়া পার্শ্ববর্তী খলিলপুর গ্রামের ফজিবুর মন্ডলের মেয়ে এবং মালয়েশিয়া-প্রবাসী সুরমান মন্ডলের স্ত্রী।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, দগ্ধ গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ ঝলসে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শ্বশুরবাড়ির গৃহবধূ ফজিয়ার ওপরে দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে আসছিল। স্বামীর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চাইতে গেলে ননদ, দেবর ও শাশুড়ি তার ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালাতো। নির্যাতনের বিষয়ে এর আগেও আমিনপুর থানাসহ পাবনা আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আগুনে দগ্ধ গৃহবধূর কাছ থেকে মৌখিকভাবে জবানবন্দি নিয়েছেন পুলিশ।
দগ্ধ গৃহবধূর ছোট ভাই সাগর মন্ডল বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে দুলাভাই বোনকে যৌতুকের দাবিতে নানাভাবে নির্যাতন করতো। দেশে থাকা অবস্থায় তার জুয়া খেলার অভ্যাস ছিল। জুয়ার টাকার জন্য বোনের ওপর নির্যাতন করতো। বোনের সংসারের শান্তির জন্য প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
পাবনা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. গৌতম কুমার বলেন, দগ্ধ নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নতর চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক বলেন, পাবনা বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানাধীন ত্রিমহনী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। আমিনপুর থানা পুলিশ বিষয়টি প্রথম পর্যায়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভিকটিমের মৌখিক কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুরমান মন্ডলের দ্বিতীয় স্ত্রী দগ্ধ ফজিয়া। শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুক ও স্বামীর পাঠানো টাকা না দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তাকে নির্যাতন করে আসছে বলে মৌখিক অভিযোগ করেছিলো। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর ননদ সামেলাকে আটক করা হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির অন্য লোকজন পালিয়ে গেছে।
বিষটি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ জঘন্যতম ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।