ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুরে প্রায়ই কবর থেকে কঙ্কাল চুরির খবর শোনা যায়। সম্প্রতি এ জেলার একটি গ্রামেই কিছুদিনের মধ্যে ঘটে গেছে অনেকগুলো কবর চুরির ঘটনা। পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন গ্রামের অরক্ষিত কবর থেকে কঙ্কাল চুরি করে সেগুলো ঢাকায় পাঠায় স্থানীয় একটি চক্র। সম্প্রতি কঙ্কাল চুরির সময় আটক হন এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চুরির পর একেকটি কঙ্কাল থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা পান তারা।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাভেদুল ইসলাম জানান, দু-মাস আগে এমন একটি ঘটনার জের ধরে তারা এক ব্যক্তিকে আটক করেছেন। তিনি বলেন, যাকে আটক করেছি, তার কাছ থেকে অনেক তথ্যও আমরা পেয়েছি। কবর চুরির কথা সে স্বীকারও করেছে। এরপর থেকে এ ধরণের ঘটনার খবর আমাদের কাছে আর আসেনি।
তবে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নিজমাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নূরুল ইসলাম বলেন, ১০/১৫ দিন আগেও নিজমাওনা গ্রামে দুটি কবর চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, চুরির ঘটনা জানার পর পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর আমরাও সতর্ক হয়েছি। মেম্বারদের বলা হয়েছে।
ওই এলাকার অধিবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ বলছেন, তার এক নিকটাত্মীয়ের কবর থেকে মৃতদেহ চুরি হয়েছে কিছুদিন আগে। আমার আত্মীয় ঢাকায় দুর্ঘটনায় মারা গেছিলো। পরে এলাকায় এনে কবর দেয়ার পর সেই কবরেও চুরি হয়েছে। তিনি জানান, এ ধরণের এমন আরও বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর তারা পেয়েছেন ওই এলাকা থেকেই।
চুরির পর কিভাবে বিক্রি হয় কঙ্কাল
আব্দুস সামাদ বলেন, সাধারণত পল্লী এলাকায় কবর দিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে রাখা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো আর ইট দিয়ে বাধাই করা হয়না বা পাকা করা হয়না। এরপর ২/৩ মাস পরে অনেক সময় দেখা যায় মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেকে ভাবে শিয়ালে খুঁড়েছে। কিন্তু গত কিছুদিনে অনেকগুলো কবরে এমন দেখার পর লোকজনের সন্দেহ হয়। দশদিন আগে আমার বাড়ির কাছেই এমন একটি কবর পাওয়া গেছে যেখান থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে।
তিনি জানান চুরির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ধরাও হয়েছিলো। তার কাছে থেকেই জানা গেছে, কঙ্কাল সংগ্রহ করে সে স্থানীয় একটি মাছ ও মুরগির খাবার তৈরির কারখানায় রাখতো। পরে সেখান থেকে এগুলো ঢাকায় পাঠানো হতো। গাজীপুরের একজন সাংবাদিক জানান চুরি হওয়া কঙ্কাল আসলে কয়েক ধাপে বিক্রি হয়।
কঙ্কাল চুরি: এবারই প্রথম?
স্থানীয়রা বলছেন আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গাজীপুরের নানা এলাকায় এ ধরণের কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। যার বেশিরভাগই থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় না। জানা গেছে কালিয়াকৈর উপজেলার একটি গ্রামে গত বছর প্রায় দু-ডজন কঙ্কাল চুরির ঘটনা বের হয়েছিলো।
আরও কয়েকবছর আগে ২০১২ সালে গাজীপুর পৌর এলাকার একটি কবরস্থান থেকে লাশ ও কঙ্কাল চুরির ঘটনা নিয়ে বেশ শোরগোল হয়েছিলো। সেবার মোট ২৩টি কবর থেকে চুরির ঘটনা ঘটেছিলো। এরপরেও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়মিত এ ধরণের চুরির খবর পাওয়া গেছে। খবর বিবিসি বাংলা।