স্বল্প মেয়াদী কার্যক্রম শেষ পায়রা বন্দরে চলছে মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম। মধ্য মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দর হতে খালাসকৃত মালামাল দেশের অন্যত্র পরিবহনের লক্ষে রাবনাবাদ চ্যানেল সংলগ্ন এলাকার সাথে সংযোগ সড়ক, আন্ধারমানিক নদীর উপর সেতু ও৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটিসহ একটি টার্মিনাল নির্মান করা হচ্ছে।
জানা যায়, এটিই হবে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল। সরকারী অর্থায়নে তিন হাজার ৯৮২কোটি টাকার প্রস্তাব সংবলিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালে এ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহন চলছে। প্রকল্প স্থাপনার ডিটেইল ড্রইং, ডিজাইন, ডকুমেন্টশনসহ প্রকল্প চলাকালীন টপ সুপারিভিশনের পরামর্শ সেবা গ্রহনের প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ন পূর্র্বক প্রনীত খসড়া চুক্তি মার্চ ২০১৯ এ সিসিজিপি কর্তক অনুমোদিত হয়েছে।
টার্মিনালের কাজটি সম্পন্ন হলে বন্দরের অপারেশনাল কাজকর্ম আরও বেগবান হবে এমন ধারনা বন্দর কর্তৃপক্ষের।
পায়রা বন্দর ভিত্তিক নানা অবকাঠামো নির্মানসহ অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের জন্য প্রায় ৬৫০০ একর জমি অধিগ্রহনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩৭৩ একর জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। বাকীটাও অধিগ্রহনের পথে।
অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৫০০ পরিবারের জন্য সার্বিক সুবিধাসহ বাসস্থান নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগস্থ পরিবারের ৪২০০জন নারী-পুরুষকে আতœনির্ভরশীল করার জন্য ৩৫টি কোর্সে প্রশিক্ষনের কর্মসূচী চলমান রয়েছে।
মধ্য মেয়াদী কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে আরও তিনটি প্রকল্প। পিপিপি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে ক্যাপিটাল এ্যান্ড মেইনটিন্যান্স ড্রেজিং, ড্রাই বাল্ক/কোল টার্মিনাল নির্মান প্রকল্প। রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০.৫০মিটার এ উন্নীত করতে পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটিন্যান্স ডেজিং প্রকল্প। প্রকল্পটি জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষনা করে বেলজিয়াম ভিক্তিক আন্তর্জাতিক ডেজিং কোম্পানী জান-ডি-নুেলর সাথে পায়রা বন্দর কর্তপক্ষের ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত সম্পাদন করেছে। ৮ হাজার ২৯৭কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ র্নিধারন করা হয়েছে জানুয়ারী ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত।
এছাড়াও ভারত সরকারের লাইন অব ক্রেডিট-৩ এর আওতায় অভ্যন্তরীন সংযোগ সড়ক, ১২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটিসহ একটি টার্মিনাল নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদের শেষ কাল ধরা হয়েছে ডিসেম্বর ২০২১। পাঁচ হাজার ১’শ ৫০কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বর্তমানে একনেক সভায় উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পিপিপি অর্থায়নে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মানের লক্ষ্যে ড্রাইবাল্ক/কোল টার্মিনাল নির্মান (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব রয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যায় নির্ধারন করা হয়েছে ২১২৫ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারী ২০১৯ এ প্রকল্পের আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছে। বর্তমানে দরপত্র মূল্যায়ন পর্যায় রয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে।
মধ্য মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্পূর্ন সরকারী অর্থায়নে রাবনাবাদে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফাস্ট টার্মিনাল, পিপিপি অর্থায়নে ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটিন্যান্স ড্রেজিং, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, পিপিপি অর্থায়নে ৭০০মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি, ড্রাইবাল্ক/কোল্ড টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের মধ্যে একসাথেই শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে পায়রা বন্দর পূর্নাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দরের রূপদান অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে।
প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে পূর্নোদ্যমে কাজ করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের মধ্যেই পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে পূর্নাঙ্গ মানের বন্দর হিসেবে চালু করার চিন্তা নিয়ে চলছে সরকারের মহা পরিকল্পনা।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলাই মাসে পাযরা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটি ব্যবহার করে তাদের পন্য খালাসের মাধ্যমে শুর হচ্ছে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। মধ্য মেয়াদী প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলে অনেক বেশি দৃশ্যমান হবে বন্দর। বন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে র্শিপ প্রতিষ্ঠান। সৃস্টি হবে কর্মসংস্থান। বাড়বে ব্যবসার প্রসার।