তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেছেন, র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এক অনন্য মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।'
রবিবার (১৯ মে) বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গ্র্যান্ড বলরুমে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বর্ষপূর্তি ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এ সময় যমুনা টিভি, সময় টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় টিভি, বাংলা টিভি, মাই টিভি এবং সোনালী ব্যাংক স্যাটেলাইটের সেবা নেয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক সই করে। চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
বিসিএসসিএল-এর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের সব বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি হবে। টিভিগুলোর জন্য আলাদা করে কোনো ভিস্যাট লাগবে না। চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে কনটেন্ট নিয়ে আমরা সরাসরি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে পৌঁছে দেবো।’
এখন থেকে বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর আর নির্ভর থাকতে হবে না বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের টিভিগুলোকে বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হতো, এখন আর তেমনটি নেই। বঙ্গবন্ধু স্যাটলাইটের মাধ্যমে এখন সম্প্রচারে যাওয়া যাবে। আজ থেকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলবে। ফলে দেশীয় টিভিগুলোর সম্প্রচার খরচও কমে যাবে।’
এছাড়া তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে বাণিজ্যিকভাবে দেখলে চলবে না। বাংলাদেশ এখন স্যাটেলাইটের দেশ; এটি গর্বের বিষয়। তিনি জানান, বর্তমানে ৩১টি চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। লাইসেন্স আছে ৪৫টি টিভির। আরও কিছু টেলিভিশন সম্প্রচারে আসবে।
হাছান মাহমুদ দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকে দেশ ও আন্তর্জাতিক খাতের অপূর্ব সমন্বয় উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস-এর সাথে এ কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ, উৎক্ষেপণ ও ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি টার্ন-কী চুক্তি স্বাক্ষর করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তেব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমরা জেনেছি, আগামী ৭-৮ বছরের মধ্যে আমাদের স্যাটেলাইট তার খরচ উঠিয়ে আনতে সক্ষম হবে। এই স্যাটেলাইট দিয়ে আমরা টেলিকমিউনিকেশন, টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট সেবা পাব।’
২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যন্ডোর কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন তিনি সেই মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত ছিলেন এবং ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন বলেও অনুষ্ঠানে জানান।
এর আগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে স্থাপনের জন্য বিটিআরসি রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক-এর কাছ থেকে ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ভূ-স্থির কক্ষপথ ব্যবহারের জন্য চুক্তি সম্পন্ন করে। একই সাথে থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস আমেরিকার বিখ্যাত “স্পেস এক্স” এর সাথে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১০ টাকার একটি ডাকটিকেট, একই মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকার একটি ডাটাকার্ড উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
উল্লেখ্য, গত বছর (২০১৮ সাল) ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রেও ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল হতে “স্পেস এক্স”-এর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী যান ফ্যালকন-৯-এর সর্বশেষ সংস্করণ ব্লক-৫ বুস্টার এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ -এর সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট-এর স্বত্বাধিকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এ কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের সার্বিক কার্যক্রম ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনস্থ বিটিআরসি-এর প্রকল্প “একটি যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রাকপ্রস্তুতি ও তদারকি প্রকল্প” এবং “বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প” এর মাধ্যমে জাতীর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। উৎক্ষেপণ পরবর্তী বিক্রয়, বিপণন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।