Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ শুক্রবার, মে ২০২৫ | ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

পানি-সবজি ও মদ বিক্রির অভিযোগ এনে বাংলাদেশিদের গ্রেফতার করছে সৌদি পুলিশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০১৯, ০১:৪০ PM
আপডেট: ২৫ মে ২০১৯, ০১:৪০ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


মধ্যপ্রাচ্যে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা। তাদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৌদিকরণের কারণে প্রতিনিয়তই বেকার হচ্ছেন বিদেশি শ্রমিকরা। পাশাপাশি কাজের অনুমতি (আকামা) নবায়ন ফি বাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি ও করবৃদ্ধির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো পথ থাকছে না তাদের সামনে।

সৌদি থেকে ফিরে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানায়, এমন নির্যাতন সৌদিতে আগে দেখি নাই। চোখের সামনে কী দেশ কী হয়ে গেল! শতকরা ৯৫ বাংলাদেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’

সাঈদ নামের একজন প্রবাসী জানান, সৌদিতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সংকট চলছে। শত শত কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সরকারের আয় কমে যাওয়ায় এক গ্লাস পানি কিনলেও কর দিতে হয়। দুই বছর আগে  মাসে যে পানির বিল দিয়েছি ২৫ রিয়াল, সেটি বর্তমানে ২০ গুণ বেড়ে হয়েছে ৫০০ রিয়াল। আগে মাসে বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি ২৮০ রিয়াল, যা এখন হয়েছে ৯৫০ রিয়াল। এ ছাড়া প্রতি মাসে আকামা নবায়নের জন্য একজন শ্রমিককে দিতে হচ্ছে এক হাজার রিয়াল। প্রতি রিয়াল ২২ টাকা ধরলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি দাঁড়ায় ২২ হাজার টাকা। পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স বাবদ ২০০ রিয়াল দিতে হচ্ছে। অথচ একজন শ্রমিক মাসে আয় করেন ৮০০ থেকে ১ হাজার রিয়াল পর্যন্ত।

সৌদিতে দীর্ঘদিন অবস্থান করা এই বাংলাদেশি আরও জানান, অর্থের অভাবে আকামা নবায়ন করতে না পারায় অবৈধ বলে গণ্য হচ্ছেন শত শত শ্রমিক। এর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সৌদি পুলিশ গ্রেপ্তারি অভিযান চালাচ্ছে। রাস্তা থেকে ধরে পানি বিক্রি, সবজি বিক্রি, মদের দোকানে কাজ করার অভিযোগ এনে জেলে পাঠানো হচ্ছে হাজারো বাংলাদেশিকে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রবাসীদের সঙ্গে থাকা টাকা (সৌদি মুদ্রা), মোবাইলসহ যা যা পাওয়া যায়, পুলিশ সেসব ছিনিয়ে নেয়।

গত বুধবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে কাজ হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় ফিরেছেন অধ শত বাংলাদেশি শ্রমিক। তাদের একজন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের যুবক মানিক আলম।

তিনি জানান, দুই বছর আগে সৌদি আরবে গেয়েছিলেন। কিছুদিন আগে টাকা পাঠানো শুরু করেন। কিন্তু মালিক কাজের অনুমতি না দেওয়ায় তিন মাস বেকার থেকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেছেন। এর মধ্যে এক মাস আগে রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে সবজি বিক্রির মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। কারাগার থেকে বের হয়ে দূতাবাসের আউট পাস নিয়ে দেশে এসেছেন।

মানিক আরও জানান, তিনি যে কারাগারে ছিলেন, সেখানে চার শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে প্রায় একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে সৌদি পুলিশ।

একই পরিস্থিতে দেশে ফেরা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার যুবক হাসিবুল জানান, তাকে গ্রেপ্তারের পর সঙ্গে থাকা ২ হাজার ৭৫০ রিয়াল (কমপক্ষে সাড়ে ৬০ হাজার টাকা), একটি আইফোন ও একটি স্যামসাং ফোন নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সেগুলো আর ফেরত দেয়নি তারা। ওই সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সৌদিতে কোনো মানুষ নাই ভাই, সব চোর। পুলিশ ধরলেই পকেট হাতায়।’

সৌদি শ্রমবাজারের এমন পরিস্থিতে করণীয় জানতে চাইলে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে সৌদি আমাদের ভালো শ্রমবাজার হবে না। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে কাজের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কনস্ট্রাকশনের কাজ কমছে। সেবা খাতে দক্ষ কর্মী তৈরি করে ইউরোপ, জাপান, সিঙ্গাপুরের দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান বলেন, ‘সৌদি আরবের পরিস্থিতি আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের শ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য প্রতিনিয়ত আমরা সে দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। যারা নির্যাতিত হচ্ছেন, তারা বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিকার পাচ্ছেন।’

তেল-সম্পদনির্ভর সৌদি আরব বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। নিজ নাগরিকদের বেকারত্ব দূর করতে গেল বছর প্রবাসী শ্রমিকনির্ভর বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সৌদিকরণের আওতায় আনে দেশটির সরকার। কয়েক দফায় ৩৬ ব্যবসাকে সৌদি নারী-পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি ও মোটরবাইক শোরুম, পুরুষ ও শিশুদের জন্য তৈরি পোশাকের দোকান, বাড়ি ও অফিসের আসবাবপত্রের দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। এ অবস্থায় দেশে প্রবাসী আয়ের ওপর বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ।

Bootstrap Image Preview