Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ফের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯, ১১:০২ AM
আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ১১:০৫ AM

bdmorning Image Preview


বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, যখন যাকে খুশি আটক, পুলিশ ও সেনা হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন। রাতের আঁধারের আড়ালে খুন-গুম। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ফের ঢালাও অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের এসব কর্মকাণ্ড মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের সব লক্ষণ বহন করছে।

বুধবার এক রিপোর্টে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

রিপোর্টের তথ্য মতে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার সেনা ও ভারি অস্ত্রসজ্জিত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এসব সেনাই রাখাইনজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

এদিকে সেনাবাহিনীতে এখনও কাজ করছে কালো তালিকাভুক্ত অস্ত্র বিশেষজ্ঞ লে. জেনারেল থিন।

প্রায় এক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে আসছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের আগস্টে প্রথম বড় ধরনের অভিযান চালায়।

পরিকল্পিত ওই অভিযানে শিশু ও নারীসহ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় প্রায় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো একে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী দমনের নামে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফের অভিযান জোরদার করে তাতমাদোর সেনারা।

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, তাদের হাতে রাখাইনে সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীও সম্প্রতি স্বীকার করেছে, গত মাসে কিউকতান গ্রামে ছয় রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে বাহিনীর সদস্যরা।

কিন্তু অ্যামনেস্টি তাদের তথ্য-উপাত্তে দেখিয়েছে, কয়েক মাসে বেআইনি অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৪ জনকে হত্যা ও আরও অনেককেই হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।

এর বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। সাম্প্রতিক এসব হত্যাকাণ্ড বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো জবাব দেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে মিয়ানমারের ‘বৌদ্ধ বিন লাদেন’ খ্যাত চরমপন্থী ভিক্ষু আশ্বিন উইরাথুকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি হয়েছে।

দেশটির এক সময়ের গণতন্ত্রী নেত্রী ও বর্তমানে সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জেরে মুসলিমবিদ্বেষী এ ভিক্ষুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে মিয়ানমার পুলিশ। উইরাথুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মিয়ানমার পুলিশের মুখপাত্র মিও থু সোয়ে বলেছেন, ‘মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের পশ্চিমের একটি জেলার আদালত মঙ্গলবার আশ্বিন উইরাথুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।’

তবে সু চির ব্যাপারে ঠিক কি মন্তব্য করা হয়েছে জানাননি এই কর্মকর্তা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

মিয়ানমারের মুসলিম বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ইসলাম বিদ্বেষ ও সহিংসতা উসকে দিয়েছেন উইরাথু। চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সামনের সারির নেতা তিনি।

সু চির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বেসামরিক সরকারের সমালোচক এই বৌদ্ধ ভিক্ষু। তবে দেশটির শক্তিশালী সামরিক সরকারের সমর্থক ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে গণহত্যা চালানো হয় তারও প্রেক্ষাপট তৈরিতে বড় ভূমিকা ছিল উইরাথুর।

সম্প্রতি এক সমাবেশে উগ্রপন্থী এই বৌদ্ধ ভিক্ষু দেশটির সরকারের দুর্নীতি এবং সংবিধান পরিবর্তনের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করা হলে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

উইরাথুর মিত্র থু সেইত্তা বলেন, ‘তাকে হয়রানির উদ্দেশে রাষ্ট্রদ্রোহের এই অভিযোগ আনা হয়েছে।’ পুলিশের ওই মুখপাত্র বলেছেন, উইরাথুর ঘাঁটি মান্দালয় শহরের পুলিশের তার গ্রেফতারি পরোয়ানার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যেকোনো তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

২০০৩ সালে তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে অন্যান্য রাজবন্দির সঙ্গে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সরকার নিয়ম শিথিল করার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

তিনি ইউটিউব এবং ফেসবুকে নানা ধরনের বক্তব্য ছড়াতে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার ৩৭ হাজারের বেশি ফলোয়ার ছিল।

সামরিক শাসনের বাইরে এসে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক যাত্রা ২০১১ সালে শুরু হয়। ওই সময় থেকে দেশটির রাজনীতিতে উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটতে থাকে দেশটির উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী আলোচিত এই ভিক্ষুর।

২০০১ সালে তিনি মুসলিমবিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী একটি গ্রুপ গঠন করেন, যার নাম ছিল ৯৬৯ গ্রুপ। এ সংগঠনটিকে উগ্রপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও উগ্রপন্থার বিষয়টি উইরাথুর সমর্থকরা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

Bootstrap Image Preview