বৃহস্পতিবার রাত ১০ টা। ধানমন্ডি ৬ থেকে মোটর সাইকেলে করে মিরপুরের উদ্দেশে যাত্রা। আরোহীর মাথায় হেলমেট, চালকের নেই। আইনবিরুদ্ধ। পথে মিরাপুর রোডে থামালেন পুলিশ সদস্য। কিন্তু ১০০ টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দিলেন। ছেড়ে দেওয়ার সময় আবার জানতে চাইলেন, খুশি মনে টাকাটা দেওয়া হয়েছে কি না।
মোটর সাইকেলের চালকের পাশাপাশি আরোহীরও হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক। না মানলে চালকের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। কড়াকড়ির কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরেই আরোহীরা হেলমেট পড়ছেন বেশ ভালোভাবেই। তবে এখনো প্রায়ই মামলা হয়। আবার অন্য আরোহীদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকলেও পুলিশ সদস্যরা হেলমেট ছাড়া- এমন দৃশ্য বিরল নয় রাজধানীতে।
চালক রেহমানের হেলমেট থাকলেও তিনি পরবেন না। আরোহী তার খালাত ভাই রায়হান। বাইকে হেলমেট আছে, কিন্তু রেহমান বললেন, ‘সারাদিন হেলমেট পরেছি, আর পরব না। একটু বাতাস লাগুক।’ পরে রায়হান সেটি পরলেন।
শুক্রাবাদ পার হওয়ার পর পার ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পার হওয়ার আগেই পুলিশ সংকেত দিল, থামতে হবে। মোটর সাইকেলের কাগজ পরীক্ষা চলল। কোনো খুঁত পাওয়া গেল না। কিন্তু চালকের মাথায় হেলমেট না দেখে ধরলেন পুলিশ সদস্য। বললেন, ‘কী অবস্থা? হেলমেট তো নাই মাথায়। এখন যদি মামলা দিয়ে দেই? তাহলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে।’
কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি পরক্ষণে বললেন, ‘ঠিক আছে, ১০০ টাকা দিয়ে দাও। চলে যাও।’
রেহমান জানেন, তিনি আইন ভেঙেছেন। তাই কথা বলার সুযোগ নেই। মামলা দিলে পরে কাগজ তুলে আনতে ঝামেলা। তাই ১০০ টাকা তিনি দিয়ে দিলেন অনেকটা খুশি মনেই।
যে তিন জন পুলিশ সদস্য মোটর সাইকেল পরীক্ষা করছিলেন, কৌশলে তাদের নেমপ্লেট দেখার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। তাদের দুই জন নেমপ্লেট খুলে রেখেছেন। কেবল দেখা গেল এক জনের নাম। তিনি আসাদ। এতটুকুই। আর কোনো পরিচয় জানার সুযোগ ছিল না।
রেহমান মানিব্যাগ থেকে টাকাটা বের করা মাত্র আসাদ তার শার্টের বোতাম খুলে ইন করা শার্টের ফাঁকে টাকাটা ফেলে দিলেন। প্যান্ট বা শার্টের পকেটে রাখলেন না।
ওখান থেকে চলে আসার সময় তিন জনের মধ্যে নেতা গোছের যিনি, তিনি আবার জানতে চাইলেন, ‘কী অবস্থা? খুশি মনে দিয়েছ তো?’
রেহমান হাসতে হাসতে বললেন, ‘হ্যাঁ, ভাই খুশি মনে দিয়েছি।’
চলে আসার সময় রেহমান ওই পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাইলেন, বাইকে ডিজিটাল নম্বরপত্র যেটি আছে, কেউ যদি সেটি খুলে আগের নম্বরপত্র দেয় তাহলে কী হবে।
জবাবে নাম না জানা পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, ‘ভাই আমার কাছে পড়লে তো খবর আছে। আর আমার মতাদর্শী আরো কিছু লোক আছে। পাইলেই মনে করেন, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।’ সূত্র- ঢাকা টাইমস