Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাঁশ উৎপাদনে বিশ্বে ৮ম বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৯, ০৫:৪৩ PM
আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯, ০৫:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দুর্যোগ প্রতিরোধী, জলবায়ুসহিষ্ণু এবং পরিবেশের বন্ধু হিসেবে পরিচিত বাঁশ হারিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের উৎপাদনও কমে আসছে। বাঁশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিয়মিত গবেষণা করছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।

প্রতিষ্ঠানটি ৩৩ জাতের বাঁশও সংরক্ষণ করেছে চট্টগ্রামের ষোলশহরে ইনস্টিটিউটের বাঁশ উদ্যানে। এসব বাঁশ সারাদেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এদিকে বিএফআরআই জলবায়ুসহিষ্ণু আরও ৬টি নতুন প্রজাতির বাঁশের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে দুটি জাতের বাঁশের কাণ্ড সবজি হিসেবেও খাওয়া যাবে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গ্লোবাল ব্যাম্বু রিসোর্সেস প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রজাতিবৈচিত্র্য ও উৎপাদনগত দিক বিবেচনায় ৩৩ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে সারাবিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে। ৫০০ প্রজাতির বাঁশ নিয়ে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। ব্রাজিল ২৩২ প্রজাতি নিয়ে রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বাঁশের তৈরি নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন হস্তশিল্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।

উত্তরা ইপিজেডে তৈরি হচ্ছে বাঁশের কফিন, যা রফতানি হচ্ছে ইউরোপে। রফতানি হচ্ছে বাঁশের বাঁশি। কাগজ তৈরি হচ্ছে বাঁশ দিয়ে। বাঁশের তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা ও ভূমিক্ষয় রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বাঁশঝাড়।

গ্রামাঞ্চলে বাঁশের গুরুত্ব অপরিসীম। স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পতাকার স্ট্যান্ড বানানো হয় বাঁশ দিয়ে। গৃহনির্মাণ থেকে শুরু করে হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে বাঁশ বহুল ব্যবহূত। ঘর, ক্ষেতের বেড়া ও খুঁটি, সবজির মাচায় ব্যবহূত হয় বাঁশ। ছোট খাল পেরুতে লাগে বাঁশের সাঁকো। তোরণ ও প্যান্ডেল তৈরি, শহরের ভবন নির্মাণেও লাগে বাঁশ। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস- সবখানেই নানাভাবে ব্যবহূত হয় বাঁশ।

বাঁশের মণ্ড থেকে বস্ত্রশিল্পের তুলা ও সুতা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ভেষজ ওষুধ হচ্ছে। বেদে সম্প্রদায়ের ব্যাম্বু ম্যাসেজ একটি অতি পরিচিত থেরাপি। এমনকি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দূরতম অনেক শহরেও প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা দিতে গড়ে উঠেছে ব্যাম্বু থেরাপি সেন্টার। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাজে লাগে এই বাঁশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. শায়লা সারমীন বলেন, বাঁশ পুষ্টিও জোগায়। কচি বাঁশের নরম কাণ্ড এশিয়াজুড়ে খাওয়া হচ্ছে। খাদ্যগুণ ও স্বাদের কারণে চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে বাঁশ ভেজিটেবল হিসেবে বেশ সমাদৃত। কচি বাঁশের ডগা বা বাঁশ কড়াল মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বর্ষা মৌসুমে বাঁশের কাণ্ড খেয়ে থাকে। বাঁশের শাখা ও পাতা উত্তম পশুখাদ্য। বিরল প্রজাতির পান্ডা কচি বাঁশ ও পাতা খেয়েই বেঁচে থাকে। পৃথিবীর বৃহৎ স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী হাতির কাছেও বাঁশ পাতা একটি প্রিয় খাবার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, বাঁশ অন্যান্য গাছপালার চেয়ে বেশি পরিমাণে অক্সিজেন উৎপন্ন করে, অথচ বেশি মাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সসাইড নেয়। নদীভাঙন ও ভূমিক্ষয় রোধে বাঁশের রয়েছে বিশাল ক্ষমতা।

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিলভিকালচার (বন সংরক্ষণবিদ্যা) জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান গবেষক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খুব শিগিগিরই বাঁশের নতুন ছয়টি জাত উন্মুক্ত করা হবে। তিনি জানান, জলবায়ুসহিষ্ণু ও দেশের আবহাওয়া উপযোগী এসব বাঁশ পাহাড়ধস, ভূমিক্ষয় ও নদীভাঙন রোধে কাজ করবে।

ইতিমধ্যে তিনটি বাঁশের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ম্যাসু বাঁশ, এস্পার বাঁশ ও ল্যাটি ফ্লোরাস বাঁশ। চীন বিশ্বে বাঁশ ও বাঁশজাত পণ্য রফতানি করে বিপুল অর্থ আয় করছে। বাঁশের ফার্নিচার ও আসবাবপত্র পরিবেশবান্ধব। জাপানে নদীভাঙন রোধ ও বাঁধ রক্ষায় বাঁশ ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরিচালক ড. খুরশীদ আকতার সমকালকে বলেন, ১৯৭৩ সালে পাঁচ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় বাঁশ উদ্যান। এটি দ্রুত বর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। কম বিনিয়োগে বাঁশ চাষে বেশি লাভ হয়। জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এই গাছ। বাঁশ উদ্যান বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণের পাশাপাশি বাঁশঝাড় ব্যবস্থাপনা, চারা উৎপাদন, বীজ সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবেও কাজ করছে।

এ দেশে হারিয়ে যাওয়া অনেক বাঁশের বীজের একটি জার্মপ্লাজম সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে। বিএফআরআই বাঁশ উদ্যানে ২৬টি দেশি ও ১৩টি টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাঁশের প্রজাতিগুলোতে ২৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ফল ধরে ও বীজ আসে। বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে এখন টিস্যু কালচার পদ্ধতি বিশেষ জনপ্রিয়। ভবিষ্যতে এর চাষাবাদ আরও বাড়বে।

Bootstrap Image Preview