Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বেঁচে ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০১৯, ০৮:১১ PM
আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯, ০৮:১১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভাগ্যক্রমে ফিরে এলো লিবিয়া থেকে ইটালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ ৮ যুবক।

তিন সপ্তাহ ত্রিদেশীয় নদীতে ভাসা বাংলাদেশের ১৭ জনের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি মাদারীপুরে।

তারা হলেন, সদর উপজেলার মোস্তফাপুর এলাকার ঘটকচর গ্রামের লুৎফর মাতুব্বরের ছেলে লাদেন মাতুব্বর, কুনিয়া ইউনিয়নের আপসি গ্রামের মোকলেস মাতুব্বরের ছেলে রাসেল মাতুব্বর, একই ইউনিয়নের আপসি গ্রামের মকবুল মাতুব্বরের ছেলে রাজিব মাতুব্বর, চরমুগুরিয়া এলাকার রাস্তি ইউনিয়নের হাজরাপুর গ্রামের হারুন বেপারীর ছেলে আজাদ রহমান ও মস্তফাপুর এলাকার লিয়াকত মাতুব্বরের ছেলে আকমান মাতুব্বর।

এদের মধ্যে রাজৈর উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের দূর্গাবর্দি গ্রামের জিয়াউল হক সেজালের ছেলে জুয়েল সেজাল ও একই গ্রামের গফুর মোল্লার ছেলে পিয়ার আলী। এ দু’জনের বাড়ি পাশাপাশি। অপর যুবক কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কুয়ালি গ্রামের মির মতিউর রহমানের ছেলে মির আজিজুল ইসলাম।

জীবন নিয়ে ফিরে এলেও ঋণের বোঝা গ্রাস করে দিয়েছে তাদের।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তিউনিসিয়া ফেরত মাদারীপুরের ৮ যুবকের মধ্যে মাত্র ৫ জন গ্রামে এলেও বাকিরা অসুস্থতার কারণে ঢাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান করছেন। আগত যুবকদের প্রায় প্রত্যেকেই ২০ থেকে ৫২ বছর বয়সী এবং এরা এলাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তি। এদের বাবা-মা বৃদ্ধ তাই উপার্জনের তাগিদেই ঝুঁকি নিয়ে তারা লিবিয়া হয়ে ইটালি পারি জমাতে চেয়েছিলেন।

তিউনিসিয়া ফেরত রাজৈর উপজেলার জুয়েল সেজাল জানান, প্রথমে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে আমাদের লিবিয়া নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পরে তিউনিসিয়ার সাগর পারে বোটে উঠানোর সময় দালাল মাদারীপুরের রাসেল মিয়া, গোপালগঞ্জের বুলেট ও ফরিদপুরের মমিন আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় এবং ভয়ভীতি দেখায়। লিবিয়া থেকে ইটালি নেয়ার উদ্দেশ্যে ছোট একটি বোটে উঠায়। ওই বোটে ধারণক্ষমতা মাত্র ২০ জন কিন্তু লোক উঠায় ৭০ থেকে ৮০ জন। কিন্তু আমরা আপত্তি জানালে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাদের হাতে থাকা অস্ত্র আমাদের দিকে তাক করে তখন জীবন রক্ষা করতে ভয়ে আমরা বোটে উঠি। তিন দফায় তারা আমার প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আর ওই দালালদের কাছে কাছে বাংলাদেশ থেকে লোক সংগ্রহ করে পাঠায় মাদারীপুরের আক্তার হোসেন।

তিউনিসিয়া ফেরত আজাদ রহমান জানান, লিবিয়া থেকে ইটালি পর্যন্ত বড় শিপের মাধ্যমে দালালরা পাঠানোর কথা বললেও আমাদের নিয়ে উঠায় ছোট নৌকায়। আমরা নৌকায় উঠতে রাজি না হলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয় দালালরা। তিন দিন না খেয়ে পথে আমরা রক্ত বমি করেছি। নৌকা ডুবিতে শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরতে পেরে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই।

তিউনিসিয়া ফেরত রাজিব মাদবরের বাবা মকবুল মাদবর বলেন, জমি-জমা বন্ধক রেখে ঋণ নিয়ে ও সহায় সম্বল বিক্রি করে আমার ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম বিদেশ। নৌকাডুবিতে ছেলে নিখোঁজের খবর পেয়ে আমি প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহর অশেষ মেহেরবান আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিয়েছে। দেশে কৃষিকাজ করে খাওয়াবো তবুও অবৈধ পথে আর সন্তানকে বিদেশ পাঠাবো না। সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখ টাকা দালালদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমি দালালদের বিচার চাই এবং আমার টাকা ফেরত চাই। দালালরা আমার টাকা পরিশোধ না করলে আমি আইনের আশ্রয় নেব।

মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন জানান, শুনেছি ১৭ বাংলাদেশির মধ্যে ৮ জনই মাদারীপুরের এবং দালাল চক্রের বেশির ভাগ সদস্যই মাদারীপুরের বাসিন্দা বলে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

Bootstrap Image Preview