বরখাস্ত ডিআইজি মিজানকে থানায় নেওয়া হচ্ছে। তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া তিনি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলেও জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১ জুলাই) ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, তিনি পুলিশের ভাবমূর্তি পুরোপুরি নষ্ট করেছেন। আমরা টিভিতে দেখেছি, (দুদকের একজন পরিচালককে) ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে সে ডেসপারেট বক্তব্য দিয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গেলে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
এছাড়া দুর্নীতির অভিযোগে ডিআইজি মিজানের ভাগ্নেকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ জুন মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
ডিআইজি মিজান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়।
সম্প্রতি দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়। মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ অধিদফতর।
কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও নারী নির্যাতন, ঘুষ প্রদান, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে দুই বছর ধরে মিজানের নাম আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিজানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বেশ কিছু অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করছিলেন খন্দকার এনামুল বাছির। সেই অনুসন্ধান চলার মধ্যেই ডিআইজি মিজান দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা বাছির। এ বিষয়ে ডিআইজি মিজান দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের সঙ্গে ঘুষ সংক্রান্ত অডিও ফাঁস করেন।
এ ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে প্রভাব খাটিয়ে গ্রেফতার এবং এক সংবাদ পাঠিকা ও এক নারী রিপোর্টারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পুলিশের নিয়োগ, বদলিতেও একসময় ভূমিকা রাখতেন তিনি। গ্রেফতার ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে টাকা আদায়ের অভিযোগও আছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।