সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটি যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বচ্ছ প্রতিবেদন না প্রকাশ করে তাহলে আন্দোলনে নামবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই আন্দোলন কর্মসূচি রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশে পালিত হবে।
দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ৪ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৪ ও ৩১ মে নিয়োগের ১ম ও ২য় ধাপের এবং ২১ জুন ও ২৮ জুন তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, প্রথম দুই ধাপের পরীক্ষাতেই সাতক্ষীরা, পাবনা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে। গত ২১ মে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সাতক্ষীরায় ২১ জনকে, গত ৩১ মে পটুয়াখালীতে ১৩ জনকে একবছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া পরের দুই ধাপের পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ বা জড়িত থাকার দায়ে আটক হন বেশ কয়েকজন। সেই থেকে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন কিছু প্রার্থী।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল চার ধাপে প্রকাশ করা হবে। আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার চিন্তা-ভাবনা করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে চার ধাপে ৬১ জেলার ফল দেয়া হবে।
চার ধাপে শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পরবর্তী ১৫ দিন পরপর পরবর্তী ধাপের ফল প্রকাশ করা হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে।’ অক্টোবরে মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হতে পারে বলেও জানান সচিব। আগামী জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। পরবর্তী ১৫ দিন পরপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী ধাপের ফল প্রকাশ করা হতে পারে। যখন যে ধাপের ফল প্রকাশ হবে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে সে জেলাগুলোতে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে চূড়ান্ত ফল একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
তবে শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসেছেন। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে চারটি তদন্ত কমিটি গঠনও করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে এসব তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ ও এর ফলাফলি নিয়ে আগে থেকেই সংশয় দেখা দিয়েছে। আর তদন্ত প্রতিবেদনে কোন ধরণের অসামঞ্জস্য থাকলে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন ফাঁস এবং নিয়োগ পরীক্ষায় হয়ে আসছে। এর পেছনে কাজ করে একটি সিন্ডিকেট, যে সিন্ডিকেট আজ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক আকারে ফাঁস হয়েছে। প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি যদি স্বচ্ছ তদন্ত রিপোর্ট না দেয় তাহলে তাহলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে সেই তদন্ত রিপোর্ট এবং পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এখনো পর্যন্ত ১০০ জনের উপর গ্রেফতার হয়েছে। যদি প্রশ্ন ফাঁস নাই হয়ে থাকে তাহলে এরা গ্রেফতার হলো কোথা থেকে বা কি জন্য। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে এটাও জানতে পেরেছি যে স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন এর সাথে জড়িত, আশা করবো আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে প্রশাসন প্রশ্ন ফাঁস রোধে সচেষ্ট হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুলহক নুর বলেন, প্রশ্ন ফাঁস একটি সামাজিক ব্যাধি। এর কারণে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত যুবক চাকুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই প্রশ্নফাঁস যারা করছে তাদের একটি শক্ত সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাসহ প্রশাসনের লোকও জড়িত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করছি মন্ত্রনালয় কি করে। যদি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গঠিত হওয়া তদন্ত কমিটি ফলাফল প্রকাশ না করে বা ফলফলে কারচুপি করে তাহলে আমরা আন্দোলন করবো। আন্দোলনের মাধ্যমে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার জন্য বাধ্য করবো।