Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ রবিবার, মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুসলিম নির্যাতন বন্ধে মোদিকে চিঠি, সেই ৪৯ বুদ্ধিজীবীর নামে মামলা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০১৯, ০৫:৫৯ PM
আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯, ০৫:৫৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জয় শ্রীরাম কিংবা জয় হনুমান স্লোগান না দেয়ার অজুহাতে নানাভাবে নির্যাতন, হেনস্থা ও হত্যার ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, লেখক, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, চিকিৎসক, পরিবেশবিদ, ভাস্কর, চিত্রকর, শিক্ষাবিদ, গায়কসহ বিভিন্ন পেশার ৪৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

চিঠিতে স্বাক্ষর দেয়া ও প্রতিবাদ করার অপরাধে এবার উল্টো তাদের নামে বিহারের মুজাফফরপুর আদালতে মামলা রুজু করার আর্জি পেশ করে পিটিশন দেয়া হয়েছে।

ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ কয়েকটি ধারায় এই ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার আর্জি রয়েছে পিটিশনে। এ পিটিশনে সাক্ষী করা হয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াত, মধুর ভাণ্ডারকর, বিজয় অগ্নিহোত্রীদের।

ভারতের ১৭তস লোকসভার নির্বাচনে বিজেপির জয় লাভের পর দেশজুড়ে অসহিষ্ণুতার মুসলিম হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবী। সে তালিকায় ছিলেন আদুর গোপালকৃষ্ণন, গৌতম ঘোষ, শ্যাম বেনেগালের মতো খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালকের পাশাপাশি কলকাতার নামকরা অভিনয়শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনসহ চলচ্চিত্র জগতের বিশিষ্টজনেরা।

কলকাতার এই সময় পত্রিকার এক অনলাইন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, বিহার আদালতে মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ কয়েকটি ধারার কথা উল্লেখ করে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন এক আইনজীবী।

বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টজনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রুজু করা হয়। পিটিশনে সাক্ষী করা হয়েছে কঙ্গনা রানাওয়াত, মধুর ভাণ্ডারকর, বিজয় অগ্নিহোত্রীদের। কেননা এদের মধ্যে ৬১ জন মিলে মোদির সমর্থনে পাল্টা চিঠি লিখেছিলেন তারা। অভিযোগ, ৪৯ জনের ওই চিঠিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির কাজকেও ছোট করা হয়েছে।

বিহারের আদালত সূত্রে জানা যায়, ‘এ মামলার শুনানির জন্য আগামী ৩ আগস্ট দিন ধার্য হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, মোদিকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে গোমাংস খাওয়া নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, জয় শ্রীরাম না-বলায় পেটানো হচ্ছে। এমনকী হত্যা পর্যন্ত করা হচ্ছে। বারবার এটা হওয়া উচিত নয়।

অপর্ণা সেন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন, কেন অন্য ধর্মের মানুষকে জোর করে 'জয় শ্রীরাম' বলানো হচ্ছে? আমি একজন হিন্দু। আমাকে যদি জোর করে এখন আল্লাহু আকবর বলতে বাধ্য করা হয়, তা হলে কি আমার ভালো লাগবে?

মোদিকে দেয়া চিঠিতে তারা আরও বলেছেন, ‘জয় শ্রীরাম এখন এক যুদ্ধের হুঙ্কার। এই স্লোগানকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো এই উন্মদনা হচ্ছে ধর্মের নামে। এটা তো মধ্যযুগ নয়। রামের নামে এই উন্মাদনা আপনি অবিলম্বে বন্ধ করুন।’

ওই চিঠিতে নিজেদের শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ উল্লেখ করে গণপিটুনি ও ধর্মের নামে চলমান উন্মাদনায় তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার ও গণপিটুনির জন্য তারা কেন্দ্র সরকারকে দায়ী করেছেন। চিঠির শুরুতেই এসব বিশিষ্টজনেরা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের পাশাপাশি দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি।

চিঠিতে তারা মোদিকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘ভারত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমানাধিকার। সংবিধানই সেই অধিকার দিয়েছে।’

Bootstrap Image Preview