জম্মু-কাশ্মীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পর এবার উপত্যকাটির সব মসজিদের ওপর নজরদারি চালাবে ভারত। রাজ্যের সব মসজিদের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারি করেছে।
নির্দেশনা অনুসারে সেখানকার সব মসজিদের বিস্তারিত তথ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কারা কারা আছেন তাদের তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
রবিবার রাতে এ নির্দেশনা জারি করেছে কাশ্মীরের জ্যেষ্ঠ সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ। শহরের পাঁচটি জোনাল সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ কার্যালয়ে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
কাশ্মীরে ওপর নজরদারি চালানোর এ পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন ১৬ সদস্যের একটি টিম। খবর পিটিআই ও গ্রেট কাশ্মীরের।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘অনুগ্রহ করে আপনার এলাকার সব মসজিদের তথ্য এবং এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের বিস্তারিত যত দ্রুত সম্ভব সরবরাহ করুন। উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষের কাজকে এগিয়ে নিতে এ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’ এর আওতায় মসজিদটির নাম, ভৌগোলিক অবস্থান, মৌলভীর নাম, তার ঠিকানা এবং মসজিদের চেয়ারম্যানের নাম ও তার ঠিকানা জানাতে হবে। কিছুটা চুপিসারে নির্দেশনাটি দেয়া হলেও এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ নির্দেশনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার কাশ্মীরের নাগরিকদের জন্য সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে বলে সন্দেহ আরও জোরালো হচ্ছে।
কাশ্মীরের বাসিন্দাদের অধিকার সংক্রান্ত ৩৫-এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে কেন্দ্র শুরু করেছে বলেও জানিয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তরা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাশ্মীর সফর শেষে জঙ্গি হামলা রোধে জম্মু-কাশ্মীরে বাড়তি ১০ হাজার সেনা পাঠায় কেন্দ্র।
দোভালের এ সফরের পর রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ, আধা সেনাবাহিনীসহ কেন্দ্রের সব প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তারপরেই এ প্রক্রিয়া কার্যকর হতে যাচ্ছে।
আগামী স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্টের মধ্যেই কাশ্মীর থেকে ৩৫-এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এ অনুচ্ছেদ বলে কাশ্মীরের নাগরিকরা সরকারি চাকরি ও জমি ক্রয়ের মতো বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজ্যে কোনো কিছু হলেই উপত্যকার নাগরিকদের ওপর দোষ চাপানো হয়। এর কারণে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ মোদি সরকারের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার মুখে কুলুপ এঁটে আছে কেন?’
সংবিধানের আর্টিকেল ৩৫-এ সরানো নিয়ে বৃহস্পতিবার এক জনসভায় ওমর কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে বলেন, অনুচ্ছেদ ৩৫-এ আর ৩৭০ সরানো নিয়ে আপনাদের এত তাড়া কিসের? আমরা সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ শুনতে চাই। তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি আছি।’ অনুচ্ছেদ সরানোর ফলে স্বাধীনতা দিবসে জম্মু-কাশ্মীর আরও বড় হামলার মুখে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওমর।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি হুশিয়ারির সুরে বলেন, রাজ্যের বাসিন্দাদের বিশেষ অধিকার খর্ব করার চেষ্টা হবে বারুদে আগুন দেয়ার শামিল। অনুচ্ছেদ ৩৫-এ বাতিলের জন্য কোনো হাত চেষ্টা করলে শুধু হাত নয়, তার পুরো শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।’