Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিমান ও এসি বাসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছে ডেঙ্গুর মশা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০১৯, ১০:৪৩ PM
আপডেট: ০১ আগস্ট ২০১৯, ১০:৪৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


চলমান সময়ে সারাদেশের আতঙ্ক ডেঙ্গু জ্বর। এ থেকে বাদ যায়নি পর্যটন শহর কক্সবাজারও। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২১ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও একাধিক ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নোবেল বড়ুয়া।

এরই মধ্যে শনিবার চট্টগ্রাম নেয়ার পথে মারা গেছেন জাবির শিক্ষার্থী কক্সবাজার পৌরসভার মেয়ে উখিনু নুশান রাখাইন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কক্সবাজারের টেকনাফে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আবদুল মালেক (৩৫)।

মালেক চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা লতা ফকিরপাড়ার বাসিন্দা মাস্টার আবুল কাশেম ওরফে কাশেম সওদাগরের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি টেকনাফ পৌরসভার উপরের বাজারে ‘মনে রেখো’ নামের একটি কাপড়ের দোকান চালাতেন বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই রাশেল।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বুধবার সারাদিন ভর্তি হয়েছেন ছয়জন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে স্থাপন করা ডেঙ্গু কর্নারে রোগীর সংকুলান হচ্ছে না। তাই কর্নার ছাড়াও ওয়ার্ডে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হয়।

শুরুতে ঢাকা কিংবা বাইরের জেলা থেকে জীবাণু শরীরে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের ডেঙ্গু পাওয়া গেলেও কয়েক দিন ধরে বদলে গেছে এ চিত্র। রাজধানীসহ বাইরের জেলায় দীর্ঘদিন না গিয়েও কক্সবাজারে অবস্থান করা কয়েকজনের মাঝে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়। এটি প্রচার হওয়ার পর স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়।

স্থানীয় সূত্রমতে, পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত পরিবেশে কক্সবাজারে ম্যালেরিয়া জীবাণুবাহী মশা বিস্তারের ইতিহাস আছে। কিন্তু এডিস মশার বংশ বিস্তারের পরিবেশ নেই বললেই চলে। ফলে এখানে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এ অবস্থায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা বিমান ও এসি, নন-এসি বাসে এডিস মশা কক্সবাজারে আসছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে দূরপাল্লার এসি বাসগুলোতে এডিস মশা সহজে বংশ বিস্তার করতে পারে।

কয়েকজন চিকিৎসক এ বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন। তারা বলেন, এডিস মশার আয়ুষ্কাল দুই সপ্তাহ থেকে প্রায় এক মাস। এ সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস কিংবা বিমানে এডিস মশা খুব সহজেই কক্সবাজারে আসছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশা নিধন জরুরি। দূরপাল্লার বাস কিংবা বিমানে এডিস মশা আসছে না- এটা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বিমানবন্দর এবং বাস টার্মিনালে সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। তবে কক্সবাজারে পাওয়া ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকা বা বাইরের জেলা থেকে রোগ বহন করে নিয়ে এসেছেন।

তবে শহরের উত্তর নুনিয়াছড়ার (কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকা) বাসিন্দা মোবারক বলেন, ‘আমি ঢাকা যাই না কয়েক বছর। মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি। সপ্তাহখানেক আগে প্রচণ্ড জ্বর ও রক্ত বমি হয়। এরপরই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এলে পরীক্ষার পর শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ছয়দিন ধরে আমি হাসপাতালে ভর্তি। এখন কিছুটা ভালো।’

মোবারকের মতো চিকিৎসাধীন আবু রাখাইনও ঢাকা যাননি বলে জানিয়েছেন। সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীর বাসিন্দা আবু রাখাইন দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফে স্বর্ণকারের কাজ করেন। পাঁচদিন আগে হঠাৎ জ্বর হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। রক্ত পরীক্ষা করে শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়ে তার। সেই থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি তিনি।

টেকনাফে ঢাকা থেকে সরাসরি বাস রয়েছে। তাই বাইরে থেকে আসা মানুষের পাশাপাশি জেলায় বসবাসকারীদের মাঝেও ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়াচ্ছে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝে শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া, বাহারছড়া, গোলদিঘিরপাড়, বাস টার্মিনাল, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ এবং ঈদগাঁও এলাকার বাসিন্দা রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে যাননি।

যতই দিন যাচ্ছে সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু আক্রান্ত পুরুষদের জন্য সদর হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি কক্ষ স্থাপন করা হলেও সেখানে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। জায়গা না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লোরে চিকিৎসা দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজারে আসা এসি ও নন-এসি বাস, পর্যটকদের সঙ্গে আনা বিলাসবহুল গাড়িগুলো কক্সবাজারে প্রবেশের সময়ই এবং ল্যান্ড করা বিমানবন্দরগুলোর পাশাপাশি পার্কিং এলাকা মশামুক্ত করা গেলে এডিস মশার ভয় কিছুটা কমবে।

কক্সবাজারের পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে এডিস মশার বিস্তার ও রোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি সেখানে স্প্রে অব্যাহত রয়েছে। ভীতি কাটিয়ে সেবা বাড়াতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন একীভূত হয়ে কাজ করছে।

Bootstrap Image Preview