ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আটককৃত সদস্যদের ইউরোপে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউসের লনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম 'দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট' প্রেসিডেন্টের এ খবরটি জানিয়েছে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রায় আড়াই হাজারের বেশি জঙ্গি সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর হাতে বন্দি রয়েছে। তাদের খুব শিগগিরই নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ইউরোপ যদি এখনই তাদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায় ওয়াশিংটন তাহলে এসব জঙ্গিকে মুক্ত করে দিতে বাধ্য হবে; যাতে করে তারা নিজ দেশে ফিরতে পারে।'
এ সময় আটককৃতদের মধ্যে বেশিরভাগ ফ্রান্স ও জার্মানির নাগরিকও রয়েছে বলে দাবি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ার কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর (এসডিএফ) হাতে এখনো প্রায় ১৩ হাজারের অধিক সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে বলে মনে করা হয়। যার মধ্যে পুরুষ বন্দির সংখ্যাই প্রায় দুই হাজার। আর বাকি ১১ হাজারের মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে আইএস জঙ্গিদের কথিত খেলাফত ভেঙে পড়ার পরপরই এদের আটক করা হয়। যদিও তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'আইএসের কথিত এই খিলাফতের পতন হলেও তাদের নিয়ে সবসময়ই সজাগ থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।'
এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, 'সিরিয়া আইএস জঙ্গিদের কথিত খিলাফতের পতন ঘটানো ইতিবাচক হলেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি এখনো বিশ্বের দরবারে একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে রয়ে গেছে। ফলে তাদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার আগ পর্যন্ত জঙ্গিদের ব্যাপারে আমাদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে।'
এর আগে ২০০৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর অঞ্চলটিতে সৃষ্ট গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ জন্ম নেয় এই আইএস নামে জঙ্গি গোষ্ঠীটি। অতীতের যেকোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর থেকে আরও বেশি হিংস্রতা নিয়ে তারা 'ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক' নামে আবির্ভূত হয়।
২০১১ সালে গোষ্ঠীটি সিরিয়ায় নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে রাক্কা নগরীকে আইএসের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে; একই সঙ্গে তারা সিরিয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধেও ধ্বংসাত্মক লড়াই শুরু করে। তখনই গোষ্ঠীটির নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট (সিরিয়া)।
পরবর্তীতে এক সময় ইরাক ও সিরিয়ার প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় কথিত ইসলামপন্থি এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি। যে কারণে তখন তাদের খেলাফতের অধীনস্থ হয় প্রায় এক কোটির বেশি লোক। যদিও মার্কিন ও রুশ বাহিনীর একের পর এক বিমান হামলার পাশাপাশি অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর কথিত সেই খিলাফত সংকুচিত হয়।
যার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে সিরিয়ার ইউফ্রেটিস নদীর এক বাঁকে। সর্বশেষ গত মার্চে গোষ্ঠীটির কথিত খিলাফতের মাধ্যমে তাদের পুরোপুরি পতন ঘটে।