ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা হয়েছে। কেবল মশার ওষুধ অর্থাৎ কীটনাশক প্রয়োগে ডেঙ্গু দমন অসম্ভব উল্লেখ করে শুরুতেই তারা জানান, এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। কোনো সরকারের পক্ষে এককভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। যে কোনো জাতীয় দূর্যোগের মতো ডেঙ্গু দমনে দল মত ভুলে সম্মিলিত চেষ্টা চালাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কলকাতা সিটি করপোরেশনের অফিসের অবস্থান করা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।
এসময় কলকাতার বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন মুখ্য উপদেষ্টা ডক্টর তপন কুমার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডক্টর মনিরুল ইসলাম, উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. সুব্রত রায়চৌধুরী, চিফ ডিরেক্টর কন্ট্রোল অফিসার ড. দেবাশীষ বিশ্বাস এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস প্রধান তৌফিক হাসান।
পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডেঙ্গু নিধন নিয়ে বিভ্রান্তি ছাড়ানো বন্ধ করতে হবে। জনগণকে এটা বোঝাতে হবে, এ কাজটা শুধু সরকারের নয়। সবারই কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা যে দেশে আছে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমবে। আমরা শুধু বর্ষাকাল না সারা বছর ধরেই মশার উৎস খুঁজি এবং তা নিধন করি। সিটি করপোরেশন ১৪৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এটা করে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে। তারা দলমত ভুলে স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কাজে অংশ নেয়।
ডেঙ্গু বহনকারী মশার বংশবৃদ্ধির জায়গাগুলো সারা বছরই পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শীতকালেও কাজ করতে হবে ডেঙ্গু নিয়ে। কারণ ডেঙ্গু বহনকারী মশা পানি ছাড়া যে কোনো স্যাঁতস্যাঁতে যদি জায়গায় ডিম পাড়ে তাহলে সে ডিম তিন বছর জীবিত থাকবে। বর্ষার মৌসুম না থাকলেও স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িতে পানির ছোঁয়া পেলে ডিম জেগে উঠবে।
কলকাতা স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডক্টর স্বপন মুখার্জি বলেন, সব ডেঙ্গু জ্বরই মারাত্মক এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। কারো মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখলে ডাবের পানি, ফলের রস, ঘন ঘন পানি খেতে হবে। দেখতে হবে সেই রোগী তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর স্বচ্ছ প্রস্রাব করছে কিনা। তাহলে ধরে নিতে হবে সেই রোগীর ডেঙ্গু ততটা প্রকট নয়। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগ মারাত্মক পর্যায়ে পৌছালে রোগীর গাঁটে গাঁটে ব্যথা ধরবে, জ্বর থাকবে, প্রেসার কুড়ি শতাংশ করে কমতে থাকবে, প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে যাবে, কোমরের কাছে ২০ থেকে ২২টা রক্তের ছোপ বা চিহ্ন দেখা যাবে তাহলে সেই রোগীকে অবিলম্বে হসপিটালে ভর্তি করা উচিত।
সারা বিশ্বে ডেঙ্গুর সেরকম কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর মূল চিকিৎসা হলো প্যারাসিটামল। শরীরের প্রতিকেজি ওজন অনুযায়ী ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল রোগীকে দিতে হবে। এটাই অনেকই কমবেশি করে ফেলি। তবে ব্রুফেন টাইপের কোনো ওষুধ দেওয়া চলবে না। আরেকটা সমস্যা হলো ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা।
বাংলাদেশে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে করনীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের প্রধান কাজ হলো সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৫টা অব্দি মশার তেল বা লিকুইড তেল ব্যবহার করা উচিত যাতে মশা না কামড়ায়। আর পরিষ্কার পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
কলকাতা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, গত বছরের চেয়ে এবার এখনও পর্যন্ত শহরে ডেঙ্গুর প্রভাব কম। ডেঙ্গু পাওয়া গিয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২০০। তবে শহরের মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন বলেও মনে করেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ ডেঙ্গু হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কলকাতা পৌর অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে আরও কম। এটাকে নিজেদের বড় সাফল্য বলেও মনে করেন কলকাতা সিটির ডেপুটি মেয়র।