Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘হঠাৎ দেখি আমি লাশের ট্রাকে’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০০ PM
আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০০ PM

bdmorning Image Preview


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। স্থান গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক। দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা-গ্রেনেড হামলা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সেদিন সমাবেশের আয়োজন করেছিল সেখানে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ দিকে ঘটে ভয়াল গ্রেনেড হামলা। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও সেদিন হতাহত হন মহিলা লীগের সভাপতি আইভী রহমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনাস্থলে মারা যান ২২ জন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইভী রহমানসহ দুজন।

ওই হামলার আহত নেতাকর্মীদের অনেকে অঙ্গ হারিয়েছেন, কেউ কেউ শরীরে গ্রেনেডের শত শত স্পিøন্টার বয়ে বেঁচে আছেন নিরন্তর যন্ত্রণা সয়ে। তাদের একজন মহিলা আ.লীগের সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসীর সেদিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণা।

‘আমি তখন ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি। তিনটার দিকে উপস্থিত হই সমাবেশে। ধীরে ধীরে জাতীয় নেতারা আসতে থাকেন। সবার শেষে ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর স্থাপিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেষ করার পরপরই এক বিকট শব্দ হলো। আমি আইভি আপার সঙ্গেই ছিলাম। আগুন আর ধোঁয়া দেখার পরপর দেখি তিনি (আইভী) পড়ে গেলেন।

‘আমি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। নেত্রীকে দেখার চেষ্টা করলাম। এরই মধ্যে আরেকটা বিকট শব্দ। আমি দেখি আমার পা থেকে মাংস উড়ে যাচ্ছে। হাতড়ে সেগুলো ধরার চেষ্টা করলাম। চারপাশে রক্ত আর লাশ। তারপর কিছু মনে নেই।

‘হঠাৎ দেখি আমি লাশের ট্রাকে! লাশের স্তূপে আমাকে ফেলে রাখা হয়েছে। বুঝতে পারি আমাদের মর্গে নেওয়া হচ্ছে। আমি তখন চিৎকার দিলাম। পরে তারা মর্গে না পাঠিয়ে ঢাকা মেডিকেলের করিডোরে ফেলে রেখে যায় আমাকে। একজন সাংবাদিক এসে আমার পাশে বসেন। পরিবারের কারো ফোন নম্বর দিতে বলেন। কিন্তু কারও ফোন নম্বরই মনে করতে পারছিলাম না। অবশেষে ছেলের ফোন নম্বরটা বলতে পেরেছিলাম।

‘তখন আমার পা শুধু রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিলেন পা কেটে ফেলার। তাই ১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। রক্ত জোগাড় করা হলেও হাসপাতালে রক্তের ব্যাগসহ বিভিন্ন সংকট ছিল। তারা পাঠিয়ে দিল সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল)। কিন্তু সেখানে ঢুকতে দেয়নি আমাকে। এভাবে সারা রাত বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। কেউই নিতে রাজি হচ্ছিল না। কারণ তারা ধরে নিয়েছিল রোগী মারা যাবে বা পা কাটতে হবে।

‘শেষ পর্যন্ত তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহায়তায় একটা হাসপাতালে থাকতে পেরেছিলাম। তখন আমাদের নেত্রী জানতে পারলেন আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি আমার পাসপোর্ট নতুন করিয়ে ভারতের অ্যাপোলোতে পাঠালেন। সেখানে দুই থেকে আড়াই মাস থাকার পর দীর্ঘ একটা সময় বিছানায় থাকতে হয়।

‘এখনো বুকে, পিঠে ব্যথা। রাত-দিন ম্যাসেজ না করলে বেশ কষ্ট হয়। এক হাজার থেকে দেড় হাজার স্পিøন্টার রয়েছে শরীরের ভেতর। পায়ের দিকে তাকালে ভীষণ কষ্ট হয়। পায়ের অনেক অংশ নেই। তারপরও বেঁচে আছি। মেডিকেলে যদি রক্তের ব্যাগের সংকট না হতো তাহলে তখন হয়তো পা-টা কেটেই ফেলত। আর আমাদের নেত্রী যদি বেঁচে না থাকতেন তবে উন্নত চিকিৎসা পেতাম না। আমাদের প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে, পঙ্গুত্বের বিনিময়ে নেত্রীকে বাঁচাতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে বড় সান্ত¡না।

‘সেই হামলার রায় হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ওই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৪৯ জন আসামির মধ্যে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও খালেদা জিয়ার নাম নেই সেখানে। তবু একটাই প্রত্যাশা- এই রায় কার্যকর হোক। এ ধরনের সন্ত্রাসীপনা, নির্যাতনের ঘটনা যেন কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির ওপর যেন আর না হয়।’

Bootstrap Image Preview