Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

গ্রেনেড হামলার আগেই তৈরি ছিল খালেদার শোকবার্তা: প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৪ PM
আপডেট: ২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৪ PM

bdmorning Image Preview


২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শোকবার্তা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় বেঁচে থাকার কথা না। ওরা ভাবেনি যে বেঁচে থাকব।’

হামলার ১৫ বছর পূর্তির দিন বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের আলোচনা বক্তব্যে রাখছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ওই হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারান, আহত হয় শত শত মানুষ।

মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলার মধ্যে শেখ হাসিনার সেদিন বেঁচে যাওয়াটা ছিল বিস্ময়কর। নেতা-কর্মীরা মানববর্ম বানিয়ে তাকে রক্ষা করেছেন শরীরে শত শত স্পিøন্টার নিয়ে। দেহরক্ষী তাঁকে বাঁচিয়েছেন স্নাইপারের ছোড়া গুলিটি নিজের দায়ে বিদ্ধ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ছোট ছোট ঘটনা আমি জানি। অনেকই বলেছে। যারা হামলা করেছে তারা এক জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল, সেখানে তারা ফোন করছে আমি মারা গেছি কি না। বোধহয় খালেদা জিয়ার তৈরি করাই ছিল আমি মরলে একটি কনডোলেস (শোকবার্তা) জানাবে। সেটাও নাকি তাদের প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন। সেটাই বড় কথা।’

আলোচনায় শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তার ওপর বারবার হামলার কথা তুলে ধরেন। শতাধিক নেতা-কর্মীর নিজের জীবনের বিনিময়ে তাকে বাঁচানোর কথা তুলে ধরে আপ্লুত হয়ে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, তিনি জানতেন তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু আল্লাহ ও দেশবাসীর ওপর ভরসা করেই দেশে ফিরে এসেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়ে জিয়াউর রহমানকে বানান সেনা প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেনা প্রধান তাকেই বানানো হয়, যে কি না বিশ্বস্ত।’

গ্রেনেড হামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া তার দায় এড়াতে পারেন না, বাবর তো স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিল। যদিও খালেদা জিয়াকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।’

‘এ হত্যা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন এরশাদও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন, খালেদা জিয়াও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন।’

তারেক রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) অনেক তথ্য বের করেছেন। এই তথ্যটা বের করেন, তারেক রহমান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ৫ নম্বরে তার যে শ্বশুরবাড়ি ওখানে এসে সে ১০ মাস থাকল এবং পহেলা আগস্ট চলে গেল ক্যান্টেনমেন্টের বাসায়। ওখানে থেকে সে কী করল? তার কাজটা কী ছিল?

হামলার পর পর পুলিশ এবং বিএনপি-সরকারের ভূমিকাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা সে সময়ের সরকারের পক্ষ থেকেই করা হয়েছিল। সেদিন আমি ওই এলাকা ছেড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শুর হয় লাঠিচার্জ। সিটি করপোরেশনের গাড়ি এনে পানি দিয়ে আলামত মুছে ফেলা হয়। আমি জানতে পেরে নানককে বলি, আলামত নষ্ট করছে তোমরা ওখানে যাও। আমাদের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে গ্রেনেড হামলার স্থালগুলোতে লাল পতাকা পুঁতে আলামত রক্ষার চেষ্টা করে।’

‘অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সেনা অফিসার নিয়ে যায়, সে সেটা রাখতে চেয়েছিল বলে সে চাকরি হারায়। কোনও আলামত না রাখার চেষ্টা তারা করেছিল। এ হামলা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল।’

‘সে সময় হাইকোর্টের বিচারপতি জয়নাল আবেদিনকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে। তারা ফরমায়েশি রিপোর্ট দেয়। সাধারণ মানুষ ধরে এনে জজ মিয়াকে আসামি করে আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে হাজির করে নাটক সাজানো হয়। এখন আস্তে আস্তে সবই বের হচ্ছে। সাধারণ গ্রামের মানুষ সে এত গ্রেনেড কোথা থেকে কিনবে?’

‘সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো, শেখ হাসিনা হ্যান্ডব্যাগে গ্রেনেড এনে নিজে মেরেছে। আমরা স্যুইসাইড করতে গিয়েছে যেন। অতগুলো গ্রেনেড হাতে করে নিয়ে যাওয়া সোজা কথা নয়। আমি এক্সপার্ট হলাম কবে? ওরা কী না পারে? মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিল।’

‘এখন ধীরে ধীরে সবই বের হচ্ছে। কীভাবে ওই জজ মিয়াকে নিয়ে এসেছে। একজন সাধারণ মানুষকে নিয়ে এসে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছিল।’

ওই হামলার পর হাসপাতালে বিএনপিপন্থী ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবাও দেননি বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘ওই দিন বাসায় পৌঁছে আমি সবার খোঁজ নেওয়া শুরু করলাম। আহতদের উদ্ধার করতে কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা মেডিক্যালে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছিল। আমাদের যারা সমর্থক তারাই সেদিন কাজ করেছে, আমাদের লোকজন রক্ত দিয়েছে।’

‘আমি চেষ্টা করেছি সারা ঢাকা শহরের হাসপাতালের খোঁজ নিয়েছি। আমি খুঁজে খুঁজে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, পরে বিদেশে পাঠিয়েছি। শান্তিনগরের ক্লিনিকে সাহারা আপাকে খুঁজে পেলাম।’

গত ১০ অক্টোবর এই মামলায় ১৯ জনের ফাঁসি, ১৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরো ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড হয়। ফাঁসি হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু। যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, , সে সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী।

এই দণ্ড কার্যকর হবে বলেও আশাবাদী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘অনেক পরে মামলা করে আমরা একটা রায় পেয়েছি। আমরা আশা করি এর বিচার হবে। কিন্তু যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের তো আর ফিরে পাব না।’

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন।

সভায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।

Bootstrap Image Preview