Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ বুধবার, মে ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্দেশনা না মানা চিকিৎসকদের উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০১৯, ০৯:২৮ AM
আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০১৯, ০৯:২৮ AM

bdmorning Image Preview


চিকিৎসকদের জেলা-উপজেলায় নিজ চেম্বারে অবস্থান করতে এর আগে বেশ কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্মস্থলের পাশেই প্র্যাকটিস করার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই চিকিৎসকরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না। কর্মস্থলের পাশে প্র্যাকটিসও করছেন না।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের ওই সব চিকিৎসকের ওপর নিজের বিরক্তি আর ক্ষোভ ঝাড়লেন। বললেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার দিলেও তাঁরা সেখানে যেতে চান না। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।

একনেকসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এসব কথা উদ্ধৃত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘চিকিৎসকরা যেখানে চাকরি করেন, সেখানেই তাঁরা প্র্যাকটিস করতে পারেন। কিন্তু তাঁরা এক জায়গায় অফিস করেন, প্র্যাকটিস করেন অন্য জায়গায়। চিকিৎসকদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কিছুতেই কাম্য হতে পারেনা।’

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, একনেকসভায় প্রধানমন্ত্রী সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন এবং চারটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়িচালক ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেন।

একনেকসভায় মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের সময় শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের নিজ কর্মস্থলে থাকার বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সভায় মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ প্রকল্পসহ পাঁচ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে পাঁচ হাজার ৪২৬ কোটি চার লাখ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ৭৮ কোটি টাকা।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জানান, চিকিৎসকরা গ্রামে যেতে চান না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত। তিনি ক্ষোভ, অভিমান ও দুঃখের সঙ্গে এ কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ডাক্তাররা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের জন্য হয়তো কিছুটা ভালো হবে।

প্রসঙ্গত, উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসদের অনুপস্থিতির ঘটনায় বিভিন্ন মহল প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিষয়ে সমালোচনা করে। চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়েছিল। সেই রিট আবেদন শুনানি শেষে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরিতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন।

সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়কে এলোপাতাড়ি যানবাহন রাখা হয়। এ ছাড়া নিয়ম না মেনে গাড়িগুলো সড়কে চলাচল করে। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। চার লেনের প্রশস্ত সড়কেও এ সমস্যা হয়। এ অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধনমন্ত্রী। একনেক সভায় ‘খুলনা-চুনকা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’  প্রকল্প  অনুমোদনের সময় সড়কের ভিডিও দেখে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়কে যাতে অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবাহী (ওভারলোডিং) কোনো যান চলতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্ধারিত ওজনের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বা লরির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক টেকসই করতে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। এই পর্যায়ে ওভারলোডিং পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যথাসম্ভব তদারকি জোরদার করে এটি কমিয়ে আনা সম্ভব।’

গতকাল একনেকসভায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর এই চার জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২২৬ কোটি টাকা। শুধু পণ্যবাহী যানবাহনের ড্রাইভার ও হেলপাররা এসব স্থানে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মহাসড়কে চালক-হেলপারদের জন্য এ সুবিধা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

সরকার শুধু বিশ্রামাগারের জন্য জায়গা দেবে। দোকান, খাবার হোটেলসহ অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া নোটিশের মাধ্যমেও সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ ‘আলীকদম-জালানিপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়ক, ‘বড়তাকিয়া (আবুতোরাব) থেকে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন)’ প্রকল্প।

Bootstrap Image Preview