বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রকাশ করা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত তালিকায় রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে ১৯ লাখের বেশি বাঙালিকে। যদিও বিষয়টিকে একটি সাম্প্রদায়িক ইস্যু উল্লেখ করে খুব শিগগিরই জাতিসংঘের শরণাপন্ন হতে পারে পাকিস্তান।
একই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে চলমান উত্তেজনা প্রসঙ্গেও ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি সেখানে তোলা হবে বলে ধারণা নয়া দিল্লির। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, এরই মধ্যে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে ভারত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতোমধ্যে কাশ্মীর ইস্যুর পর আসামের এনআরসি নিয়েও মুখ খুলেছেন। যেখানে তিনি বলেন, 'প্রধানত মুসলিমদের তাড়ানোর জন্যই এনআরসি করেছে নয়াদিল্লি।' তবে ভারত এই দুটি ইস্যুতেই জাতিসংঘে বিতর্ক করতে প্রস্তুত।
বিজেপির দাবি, এনআরসি নিয়ে ভারত সরকারের কিছুই করার নেই; কেননা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যা হওয়ার হচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
সূত্রের বরাতে গণমাধ্যম 'দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া' জানায়, জাতিসংঘের অধিবেশনে ভারতের মুখপাত্ররা আসাম চুক্তির ওপর জোর দিতে পারেন। কেননা ১৯৮৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে আসাম সরকারের 'অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন' এবং 'অল আসাম গণসংগ্রাম পরিষদ' নামে দুটি চুক্তি হয়েছিল। মূলত তখন রাজ্যে বিদেশি বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর চুক্তিগুলো হয়।
বর্তমানে সদ্য প্রকাশিত এনআরসি তালিকার বিরুদ্ধে আসামের মুসলমানদের চেয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোই বেশি আন্দোলন করছে। তালিকা থেকে ১৯ লাখের অধিক লোক বাদ পড়েছেন যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু।
একই সঙ্গে যারা এই তালিকায় এখনো অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি তারা কখনোই রাষ্ট্রহীন কিংবা বিদেশি হবেন না। মূলত এমন নিশ্চয়তার কথাও জাতিসংঘকে জানাতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি।
এ দিকে শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকার (এনআরসি) মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে। যেখানে আগের তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে। তাছাড়া স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ লোকের। যদিও এই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে এবার আসাম তো বটেই, গোটা ভারত এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশ পর্যন্ত মোদী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকত্ব নেই; এমনকি ভারত ছাড়া আর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই তাদের। এমন অবস্থায় ভারত তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে মানুষগুলো একদমই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।
যে কারণে ভারত অনেকটা বাধ্য হয়েই তালিকা থেকে ছিটকে যাওয়াদের নিজ দেশের ভেতরেই বন্দি বানিয়ে রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। যার অংশ হিসেবে আসামে এরই মধ্যে নতুন করে ১০টি বন্দি শিবির নির্মাণের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তাছাড়া অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
অপর দিকে গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছিল ক্ষমতাসীন মোদী সরকার। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে বিতর্কিত লাদাখ ও জম্মু ও কাশ্মীর সৃষ্টির প্রস্তাবেও সমর্থন জানানো হয়।
এসবের মধ্যেই চলমান কাশ্মীর ইস্যুতে পাক-ভারত মধ্যকার সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে একে একে ভারত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, যোগাযোগসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান। যদিও এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারত পাশে পেয়েছে রাশিয়াকে এবং পাক সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরান।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারসহ রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানানো হলেও; কাশ্মীর জুড়ে এখনো সংঘর্ষ ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি পাকিস্তানের।