Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ সোমবার, জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নাগরিকত্বসহ ৩ দাবি না মানলে রাখাইনে ফিরবে না রোহিঙ্গারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৬ AM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৫৬ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মিয়ানমারের নাগরিকত্ব, বসতভিটা ফেরত ও চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে রাখাইনে ফিরে না যাওয়ার কথা চীনা প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। 

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টেকনাফের ২৬ নম্বর শরণার্থী ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ প্রতিনিধি দলকে এসব কথা জানান রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারে ফিরে যেতে কি সমস্যা লি জিমিং-এর এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে এখনো শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেদেশে বিবাদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘাত লেগে আছে। এখনো যেসব রোহিঙ্গা সে দেশে রয়েছে তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। তা ছাড়া গত ২০১২ সালে আকিয়াবে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে কয়েক মাসের জন্য একটি জায়গায় জড়ো করে রাখলেও এখনো পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে মিয়ানমার যাব। 

কী করলে মিয়ানমারে যাবেন 

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা আবুল ফয়েজ, গুরা মিয়া ও মো. জসীম বলেন, আমাদের তিনটি দাবি পূরণ করলে কালকেই স্বইচছায় নিজ দেশে চলে যাব। দাবিগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, কেড়ে নেওয়া জমি ফেরত ও নিরাপত্তা নিশ্চিয়তা করন।

বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ পাঠালে যাবেন কি না লি জিমিং-এর এমন প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা যাবেন বলে সম্মতি দেয়।

লি জিমিং বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি পদ্ধতি বলেন। একটি হলো রোহিঙ্গাদের গ্রুপের জন্য জনপ্রতি দুটি মোবাইল সেট দেওয়া হবে। একটি নিজের, অন্যটি পরিবারের জন্য। যদি মিয়ানমারে পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে পরিবারকে ভালো আছি বলে খবর দিয়ে নিয়ে যাবেন। আরেকটি হলো, একটি গ্রুপ মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে চলে আসবেন, যদি সেখানের অবস্থা ভালো হয় পরিবার নিয়ে যেতে পারবেন।’

এদিকে মতামত শেষে শালবন শিবিরের অশ্রিত রোহিঙ্গাদের তিনটি বাসায় যান লি জিমিং। তাদের বাসা দেখেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছু স্কুল ব্যাগ ও ফুটবল তুলে দেন।

এর আগে সকাল ১০ টার দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট পরির্দশন করেন। পরিদশর্ন কালে প্রত্যাবাসন বিষয়ে লি জিমিং জানতে চাইলে জবাবে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘প্রত্যাসনের জন্য বাংলাদেশে সব কিছু প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে প্রত্যাবাসন করা যাবে।’

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত), নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান, জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি জাদিমুরা ও শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, ‘চীনের রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট ও শালবাগান শিবিরের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন পাশাপাশি ওই শিবির পরিদর্শন করেন।’

এর আগে চীনের প্রতিনিধি দল গতকাল রোববার সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেদিন নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু শুন্য রেখায় আটকা পরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সীমান্ত ঘুরে দেখেন।

গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রতিনিধিদল পাঠায় চীন। এ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

Bootstrap Image Preview