আওয়ামী লীগে খারাপ লোকের দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি লাগিয়ে, শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে অপকর্ম করবে, দুর্নীতি করবে, লুটপাট করবে, ভূমি দখল করবে তারা আওয়ামী লীগের লোক হতে পারে না। আমাদের লোকের অভাব নেই, খারাপ লোকের দরকার নেই। ভালো লোকদের জন্য দরজা খুলে দিন। ভালো লোকদের জন্য শেখ হাসিনা দরজা খুলে দিয়েছেন। রাজনীতির দুয়ার, আওয়ামী লীগের দুয়ার ভালো লোকদের জন্য খুলে দিতে হবে। গুটি কয়েক দুর্নীতিবাজ, লুটেরা-মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজদের জন্য গোটা পার্টির দুর্নামের ভাগিদার হতে পারে না। তাদের বর্জন করুন। আওয়ীমী লীগে বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালনের আহ্বান জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে পার্টির ক্লিন ইমেজ গড়ে তুলতে হবে। ক্লিন ইমেজ করতে হলে আমাদেরকে পরগাছা মুক্ত আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে হবে। সেটাই শেখ হাসিনার স্বপ্নের আওয়ামী লীগ। সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আওয়ামী লীগ। আজকে দু:সময়ের কর্মীরা আওয়ামী লীগে কোনঠাসা হবে, সে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়, সে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নয়। দু:সময়ের নেতাকর্মীরা কোনঠাসা হয়ে যাবে সেটা আওয়ামী লীগ নয়, আওয়ামী লীগের আদর্শ সেখানে নেই।
তিনি বলেন, আমি আহ্বান জানাবো, আওয়ামী লীগকে বিশুদ্ধ করুন, আওয়ামী লীগ থেকে দুষিত রক্ত বের করে দিন। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করুন। সেটাই আজকের সময়ের আহ্বান, সেটাই শেখ হাসিনার আহ্বান। সেটাই আমাদের নেত্রীর চাওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনাকে বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি নিউওয়ার্কে বলেছেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন পৃষ্টপোষকদের কি করা হবে? পৃষ্টপোষক হোক গডফাদার, অপকর্ম যারাই করবে, অপকর্মকে যারাই মদদ দিবে, যারা দুর্ণীতি করবে, যারা লোটপাট করবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কাজেই এই ব্যপারে আপোষের প্রশ্নই উঠে না। নেত্রীর ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিতে হবে। আমার বিশ্বাস আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনের দাবি মামা বাড়ির আবদার বলে উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি তুলেছেন, আগে বলতেন অনুমতি মিলে না, এখন অনুমতি পেয়েই ক্ষমতার রঙ্গিন খোয়াব দেখছেন। ক্ষমতার রঙ্গিন খোয়াব অচিরেই কর্পুরের মত উবে যাবে। আওয়ামী লীগকে চেনেন না। অন্দোলন কত প্রকার ও কি কি, আওয়ামী লীগ অতীতে হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে করলে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করবো। আর সহিংসতা করলে, সহিংসতার কোন উপাদান যুক্ত করবেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমোচিত জবাব দিতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে। তাই রঙ্গিন খোয়াব দেখে লাভ নেই। জাতীয় সরকারের দাবি মামা বাড়ির আবদার, এই আবদার বাংলার জনগনের কাছে হাস্যকর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতাদের কথা শুনলে মির্জা ফখরুলের কথা শুনলে আমার কাছে মনে হয়, তিনি একজন পরাজিত রাজনীতিকের মত অসংলগ্ন প্রলাপ বকছে। এটা তার অসংলগ্ন প্রলাপ ব্যর্থতার ফলশ্রুতি। আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ একজন পরাজিত রাজনৈতিক। পরাজিত রাজনীতিকরা যেমন প্রলাপ বকতে থাকে, মির্জা ফখরুলের অবস্থা তেমন।
সামনের খেলা মেকাবেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়ে আওয়মী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। অনেক খেলা আছে, এই দেশে অনেক চক্রান্ত আছে এ পর্যন্ত ২০বার নেত্রীর উপর আক্রম হয়েছে, তাকে সরিয়ে ফেলারও ষড়যন্ত্র আছে। কাজেই যে কোন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই সমোচিত জবাব দিতে পারবে। আপন ঘরে যেন শত্রু না হয়, আপন ঘরে যার শত্রু, তার শত্রুতা করার জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই। আপন ঘরে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড. কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।