কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই। মাথায় ক্যাপ। হাত দুয়েক দূরে রাখা রিকশা। আলো-আঁধারিতে ভেসে আসছে গিটারের সুর। সঙ্গে একটা মায়াবী গলা-কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই। ঠিক মান্না দের মতো নয়। তবে কোথায় যেন মিলে যায়!
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গায়কের নাম জহুরুল ইসলাম। বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরের বাঘবাটি গ্রামে। ঢাকায় থাকেন হাজারিবাগে।
বুধবার সকালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জহুরুলের। জানান, অভাবের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। বাবা নেই। গ্রামে অসুস্থ মা।
জহুরুলের ভিডিও ধারণ করেছেন এস এম সুজা উদ্দিন নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী। গিটার বাজিয়েছেন নাজমুল হাসান নামের আরেকজন।
এই দুজনের সঙ্গে জহুরুলের দেখা হয় ধানমন্ডি আটে। সেখানে আলমাসের গলিতে বসে গানটি গান তিনি।
শুনে শুনে গাওয়া। রিকশা চালাতে চালাতে গাই। কখনো ফুটপাতে বসে গাই। এ এক আলাদা শান্তি ভাই, ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসা কথা শুনতে শুনতে মনে হয় এ যেন নিখাদ এক শিল্পী,
শ্রীকান্ত আচার্য, কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, সুবীর নন্দী, আবদুল হাদী স্যারদের গান আমি ফলো করি।
জহুরুলের গাওয়া গানটিকে বাংলা সংগীত জগতে একটি কালজয়ী গান বলা হয়। গানটির সুর করেন কলকাতার কিংবদন্তি সুরকার সুপর্ণকান্তি ঘোষ। ‘সে আমার ছোট বোন’, ‘ও মালিক সারা জীবন কাঁদালে আমায়’ গানেরও সুর করেছেন তিনি। তার সুরে ৫০টির মতো গান গেয়েছেন মান্না দে।
২০১৫ সালে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘কফি হাউজ’ গানের ইতিহাস বলেন সুপর্ণকান্তি, ‘‘৮৩ সালে গৌরী কাকা (গৌরী প্রসন্ন মজুমদার) বিকেলবেলা এসেছেন। আমি বললাম, ‘পারো না আড্ডা নিয়ে একটা গান লিখতে।’ তিনি বললেন, ‘আড্ডা নিয়ে গান? ভালো বলেছিস তো!’ সঙ্গে সঙ্গে বিড়বিড় করলেন, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই।’ তারপর তো ইতিহাস।’’
মান্নাদে গানটা শুনেই সুপর্ণকান্তিকে বলেন, ‘আমি তো এটা গাইবোই। দেখো, এটা সুপারহিট হবে।’
বাংলাদেশের জহুরুল এসব গল্প জানেন না। কিন্তু শুনেছেন গৌরী প্রসন্নর নাম। ঠিকই জানেন এই গানের লেখক তিনি!
‘গৌরী প্রসন্নের লেখা আমাকে খুব টানে। আমার তো গান শেখার ইচ্ছা ছিল, অভাবের কারণে পারিনি। মায়ের অনেক দিন ধরে লিভারের সমস্যা। বোনকে বিয়ে দিয়েছি। আয়ের মাধ্যম শুধু এই রিকশা। এই গানের কারণেই অভাব আমাকে ভাবায় না জানান জহুরুল।