খুলনা মহানগরীতে হাবিবুর রহমান সবুজ নামের এক যুবককে ১২ টুকরা করে হত্যার ঘটনায় পাঁচ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)। চার্জশিট বলা হয়েছে, স্ত্রী ও বোনের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে তাকে টুকরা-টুকরা করে হত্যা করে অভিযুক্ত কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন ও তার সহযোগিরা।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক শেখ আবু বকর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হচ্ছে- সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফ, অনুপম, খলিলুর রহমান, গাজী আবদুল হালিম ও এ কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন। মোস্তফা মামুন পলাতক রয়েছে। অন্য চার আসামি গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে রয়েছে। মামলার চার্জশিটে মোট ৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। নিহত হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদরের উমরা এলাকার আবদুল হামিদ সরদারের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার একটি ইট ভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতেন।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মার্চ সকালে নগরীর শের-এ বাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের মরদেহের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে ফারাজীপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দুটি ব্যাগে থাকা মাথা ও দুই হাতসহ অন্য অংশগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গত ৯ মার্চ খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সূত্র জানায়, গত ১১ মার্চ র্যাবের সদস্যরা নগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর ৩৪নম্বর ফারাজীপাড়া লেনের হাসনাত মঞ্জিলে তল্লাশি চালানো হয়। প্রায় তিন মাস ধরে এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন আসাদুজ্জামান।
র্যাব জানায়, আসাদুজ্জামানের ঘরের খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো নিহত হাবিবুরের কাটা পা ও বাথরুমে বালতির ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো মরদেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও দা উদ্ধার করে র্যাব। নিহত হাবিবুরের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আসাদুজ্জামানের ঘরে পাওয়া যায়। র্যাবের আরেকটি টিম বটিয়াঘাটা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যুবক অনুপম মহলদারকে আটক করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত খুলনা থানা থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআই জানায়, তারা গত এপ্রিল মাসে হত্যাকাণ্ডে জড়িত খলিলুর রহমান ও গাজী আবদুল হালিমকে আটক করে।
সূত্রটি জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে নিহত হাবিবুর ও পলাতক আসামি এ কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন পৃথক মামলায় কারাগারে ছিল। কারাগারে তাদের পরিচয় হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে হাবিবুর কারাগার থেকে জামিনে বের হয়। হাবিবুর জেল থেকে বের হওয়ার সময় মোস্তফা তাকে কারামুক্ত করতে সহযোগিতার অনুরোধ জানায় এবং তার স্ত্রী রিক্তার মোবাইল নম্বর দেয়। কিন্তু হাবিবুর কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি মোস্তফার স্ত্রী রিক্তার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। হাবিবুর রিক্তাকে নিয়ে কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়।
এছাড়া মোস্তফার বোনের সঙ্গেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মোস্তফা কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে হাবিবুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার অনুরোধে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আরও চার জন হাবিবুরকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। ওই চার জনের সঙ্গে মোস্তফার পরিচয় কারাগারে থাকাকালীন। গত ৬ মার্চ রাতে ফারাজীপাড়া এলাকায় আসাদের বাসায় হাবিবুরকে ডেকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো মিষ্টি খাওয়ানো হয়। হাবিবুর অচেতন হয়ে পড়লে পাঁচজন মিলে তাকে হত্যা করে এবং এরপর লাশ ১২ খণ্ড করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক শেখ আবু বকর জানান, পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মূল আসামি মোস্তফা মামুন এখনও পলাতক রয়েছে। সে ভারতে চলে গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।