ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে পাঁচ অ-বাঙালি শ্রমিককে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এছাড়া আরও একজনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক, হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাঁও জেলায় কটারসু এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকা শ্রমিকদের বাইরে ডেকে এনে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নিহত শ্রমিকরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিহি থানার বাহালনগর এলাকার বাসিন্দা। তারা হলেন কামরুদ্দিন শেখ, মুরসুলিন শেখ, রফিক শেখ, শেখ নইমুদ্দিন এবং রফিকুল শেখ। আহত শ্রমিকের নাম জহিরুদ্দিন।
নিহতরা প্রত্যেকেই কাশ্মীরে আপেল বাগানে কাজ করার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। এবারও ওই জেলার প্রায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাশ্মীরে আপেল পাড়ার কাজে যোগ দেন।
গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে রাজ্যটিকে বিভক্ত করে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ-এই দুইটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। সেই থেকে অশান্তির আশঙ্কায় প্রায় ৮৬ দিন ধরে উপত্যকার স্বাভাবিক জনজীবন প্রায় স্তব্ধ। এনিয়ে বিরোধী দলগুলি সরব হয়। যদিও সরকারের তরফে জানানো হয় সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এমন অবস্থায় জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সেখানে পৌঁছয় ২৩ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাংসদ দলের প্রতিনিধিরা। এরপরই কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা। এনিয়ে গত ১৫ দিনে ছয়টি জঙ্গি নৃশংসতার ঘটনা ঘটল। এতে আপেল ব্যবসার সাথে যুক্ত ৯ জন ব্যক্তি প্রাণ হারালেন।
পরিবারের নিকট আত্মীয়দের নিহত হওয়ার খবর পৌঁছতেই মুর্শিদাবাদের গ্রামে শোকের মাতম নেমে এসেছে। এক নিহত শ্রমিকের মা জানান, এবছর তার ছেলে কাশ্মীরে যেতে চায়নি। যদিও তার অন্য বন্ধুরা কাশ্মীরে যাওয়ার কথা শুনে সেও রাজি হয়। সে আমাকে কথা দিয়েছিল যে একমাস পরেই সে গ্রামে ফিরে আসবে এবং এখানে ধান কাটার কাজ করবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।
বুধবার সকালেই গ্রামে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন কংগ্রেস লোকসভার সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এ সময় কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দাগেন তিনি। তার অভিমত, ‘কেন্দ্রীয় সরকার দেখাতে চাইছে কাশ্মীর শান্ত। জঙ্গিরা দেখাতে চায় কাশ্মীর শান্ত নয়। এমন অবস্থায় নিরুপায় প্রাণ যাচ্ছে মানুষের।’ নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জি। বুধবার সকালের দিকে ট্যুইট করে তিনি লেখেন, ‘কাশ্মীরে এই বর্বর হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমরা হতবাক ও গভীরভাবে দুঃখিত। মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচ শ্রমিক তাদের প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোন ভাষা নেই। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পরিবারগুলিকে সবরকম সহায়তা দেওয়া হবে।’
হামলার পরই এলাকা ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। ডাকা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনীকেও। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি দিলবাগ সিং পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন এই হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, ‘আমি নিজে কুলগাম পুলিশের সাথে কথা বলেছি। আরও বিস্তারিত বিষয় পাওয়ার চেষ্টা করছি।