ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গৌরব অধিকারী নামের এক হিন্দু যুবক গত ১২ নভেম্বর মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার মায়ের বিয়ে দিতে চাই’ স্বনির্ভর সুপাত্র চাই। পাত্রীর বয়স ৪৫। স্নাতক। বই পড়তে এবং গান শুনতে ভালবাসেন। চন্দননগর নিবাসী। মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে এমন পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি জননন্দিত সাহিত্যিক হুমাযূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান একজন অতিরিক্ত সচিবকে বিয়ে করেছেন। তার ছেলে নুহাশ হুমায়ূন মায়ের বিয়েতে উপস্থিত থেকেছেন এবং নিজের আনন্দের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মুফতি ইউসুফ মাহমুদি তার এক ওয়াজ মাহফিলে এই দুই বিয়ে এবং দুই পুত্রের প্রশংসা করেছেন এবং সমালোচকদের ধিক্কার জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্ত নারীর বিয়ে দেওয়ার যৌক্তিকতা পবিত্র কোরান-হাদিসের আলোকে তুলে ধরেছেন। এমন একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে মুফতি ইউসুফ মাহমুদি বলেছেন, ভারতের এক যুবক গৌরব। গৌরব তার মায়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছে ‘আমার মায়ের বিয়ে দিতে চাই’।
উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, মায়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে স্ট্যাটাস দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, আমি আমার মায়ের বিয়ে দিতে চাই! বিষয়টা আপনারা কেমন দেখতেছেন, ভালোভাবে না খারাপভাবে? প্রথমে শ্রোতারা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘খারাপভাবে’। পরে এসব বিয়ের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলে শ্রোতারা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।
মুফতি ইউসুফ মাহমুদি আরও বলেন, গৌরবকে লোকেরা জিজ্ঞেস করেছে, এটা কেমন কাম করলা, মাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কেন তুমি স্ট্যাটাস দিলে। তখন গৌরব বলে কয়েক বছর আগে আমার বাবা মারা গেছে। আমার মা যুবতী মানুষ। আমি অফিসে চাকরি করি। আমি এনালাইসিস করে দেখেছি, গান, কবিতা, বই কোন মানুষের সঙ্গী হতে পারে না। আমি যখনি ঘরে আসি দেখি মা বিষণ্ণ অবস্থায় রয়েছে। মা ভালো করে কাজ কর্ম করতে পারেনন না। এই জন্য আমি মায়ের দিক বিবেচনা করে দেখেছি, সমাজের আর দশটা মানুষ যদি শান্তিতে থাকতে পারে, তাহলে আমার মা কেন পারবেন না। আমার মা যেহেতু সঙ্গীহারা অতএব মাকে যদি বিয়ে দিতে পারি, যদি একজন জীবন সঙ্গী হয়, তাহলে আমার মাও শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারবেন।
শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও বলেছেন, মায়ের বিয়ের জন্য পুত্র গৌরবের স্ট্যাটাস পছন্দ হয়নি। এটা নিয়ে আপনাদের দোষ দিচ্ছি না। এবার বোঝার চেষ্টা করেন।
মুফতি বলেন, মানবতা বলতে যদি আপনি কিছু বোঝেন, ধর্ম বড় ব্যাপার, ধর্মের কথা পরে। আপনার মা আমার মা, আপনার বোন আমার বোন যদি ভালোভাবে বাঁচার অধিকার রাখেন। সেটা ইন্ডিয়ার হোক বা বাংলাদেশের হোক, তাহলে গৌরবের মা কেন অধিকার রাখেন না?
গৌরব স্ট্যাটাস দিয়েছে এমন দেশের (ভারত) মধ্যে বসে। যেই দেশে আইন ছিল সতীদাহ আইন। স্বামী যদি মারা যায় তাহলে স্ত্রীকে সাথে সাথে চিতায় নিয়ে স্বামীর সাথে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। যখন সেই দেশের মানুষরা দেখলো শত সহস্র বছর যাবৎ এই আইন চলছে, এটা তো মানবতার মধ্যে পড়ে না। এরপর তারা আইনের পরিবর্তন করছে ঠিকই কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই দেশে স্বামী মরলে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ তাদের সমাজ সমর্থন করে না। মহাভারতের আইনের কথা বলছি। হিন্দু ধর্মের কথা বলছি, হিন্দু আইনের কথা বলছি।
বক্তা বলেন, ‘গৌরবকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জবানবন্দি দেয়, ভালো কোনো লোক পেলে মাকে বিয়ে দেব। সেই মহিলাও এটা সমর্থন করেছে।’
‘এবার বাংলাদেশ থেকে একটা দলিল দেই। হুমায়ূন আহমেদের নাম শুনছেন আপনারা। তিনি মারা গেছেন সম্ভবত ২০১২ সালে। ওনার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি (বিবাহ বিচ্ছেদ) হয়ে গেছে আরও আগে। এরপর ওনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্পর্কে আমি কোন আলোচনা করতে চাই না। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গত কয়েকদিন আগে নিজে বিয়ে করেছেন একজন সচিবকে। এই ব্যাপারে সাংবাদিক তার ছেলে নুহাশকে প্রশ্ন করেছে তোমার মায়ের বিয়ের ব্যাপারে তোমার কী বক্তব্য- উত্তরে নুহাশ বলেছেন বিয়ে তো আমি নিজেই দিয়েছি। সামনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও করবো।
মুফতি ইউসুফ মাহমুদি বলেন, ইসলাম বলেছে, যার স্বামী মারা গেছেন তার জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করো। যে মেয়ের বিয়ে হয়নি, তার চেয়ে বিধবার বিয়ে আগে দাও। ইসলাম বলেছে, নবী বলেছে বিধবার বিয়ে দেওয়া আলাদা সওয়াবের কাজ। গৌরবের মা বলে কোন কথা নয়। নুহাশের মা বলে কথা নয়। যেই মহিলার স্বামী মারা গেছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন স্বামী ছাড়া বাঁচা কতটা দুঃখের। তারা যেটা করেছে সেটা ইবাদত।