গত মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের বাজারে ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়েছিল পেঁয়াজের দাম। এর মাসখানেক পরেও বাজারে নতুনের সঙ্গে আমদানির পেঁয়াজ মিললেও দাম কমার লক্ষণ নেই। এখনো দুইশ’র ওপর দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি।
বাংলাদেশের মতো এবার পাশের দেশ ভারতেও ডাবল সেঞ্চুরির কোটা পার করেছে পেঁয়াজ। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে ব্যাঙ্গালুরুর খুচরা বাজারে দুইশ’ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এটি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, পাইকারি বাজারে প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) পেঁয়াজ ৫ হাজার ৫০০ থেকে ১৪ হাজার রুপিতে বিক্রি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। ফলে দিন দিন ঘর বা হোটেলের রান্নাঘর থেকে গায়েব হতে চলেছে ভারতীয়দের অতিপ্রিয় সবজিটি।
জানা যায়, ভারতে প্রতি বছর চাহিদা রয়েছে ১৫০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের। সেখানে ২০ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এক কর্ণাটক রাজ্যেই।
কিন্তু অতিবৃষ্টি ও বন্যায় এ বছর প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দেয় সারাদেশেই। একারণে তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার।
পেঁয়াজের দামের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে গত তিন সপ্তাহে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। পেঁয়াজের দাম ২০০-র ঘর ছুঁতেই এক ধাক্কায় ৯০ শতাংশ ক্রেতা কমে যাওয়ায় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাশ পাসোয়ানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ‘প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করার’ অভিযোগ এনে মুজ্জাফফরপুর মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে মামলাটি করেছেন এম রাজু নায়ার নামে জনৈক সমাজকর্মী।
যদিও তুরস্ক থেকে ১১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সেই পেঁয়াজ কবে বাজারে আসবে তা নিয়েই এখন প্রশ্ন দেশজুড়ে।
এশিয়ার বৃহত্তম বাজার ভারতের লাসালগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ ঢুকেছে মাত্র ৫২০ টন। যেখানে রোজ গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ টন পেঁয়াজের জোগান থাকে।
লাসালগাঁও এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান নানাসাহেব পাতিল মনে করেন, অসময়ে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণেই বাজারে পেঁয়াজের দাম এত চড়া। বৃষ্টিতে পুরোনো মজুত করে রাখা পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এমনকি নতুন যে পেঁয়াজ উঠেছিল, বৃষ্টিতে তা-ও পচে নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে এখন পেঁয়াজের আকাল।
তার ধারণা, গোটা ডিসেম্বর পেঁয়াজের দাম এমন চড়া থাকবে। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে একটু একটু করে কমবে। তবে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হতে হতে ২০২০-র ফেব্রুয়ারি। তার মতে কেন্দ্র পেঁয়াজ আমদানি করলেও বাজারে যে বিপুল চাহিদা তাতে দামে লাগাম টানা এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।