Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৪ বুধবার, মে ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুসলিম হওয়ার ঘোষণায় ভারতের সাবেক কর্মকর্তাদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৩৫ PM
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৩৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


ভারতে নানা বাক বিতণ্ডার মধ্য দিয়ে সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় পাস হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল (সিএবি)। এই বিলের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলি। বসে নেই শিল্পী, সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিরাও। সবমিলিয়ে ৬২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মোদিকে চিঠি লিখেছেন।

এ বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুসলিম হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা। তাদের এ ধরনের ঘোষণা আসলে এক ধরনের আন্দোলন।

এই আন্দোলন শুরু করেছেন ভারতের সাবেক আইএএস হর্ষ মন্দার। তিনি গত সোমবার সন্ধ্যায় নিজের টুইটারে দেয়া এক পোস্টে বলেন, ‘সিএবি (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) পাস হলে আমি সরকারিভাবে মুসলিম হিসাবে নিজের নাম নিবন্ধন করবো। তারপর আমি এনআরসি-তে কোনও নথি জমা দেব না। ফলে নথিবিহীন মুসলিমদের যে শাস্তি দেয়া হয়, অর্থাৎ ডিটেনসন ক্যাম্পে পাঠানো, নিজের জন্য আমি সেই শাস্তির দাবি তুলবো। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের মতো শাস্তি চাইবো।’

তার এই টুইট মাত্র একদিনে ৬৭৬৩ বার রিটুইট হয়েছে। এতে লাইক পড়েছে ২০ হাজারের বেশি।

একই রকমের ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য আইএএস-এর চাকরি ছেড়ে দেওয়া শশীকান্ত সেন্থিল-ও। তিনি এনআরসি হলে কোনও নথি জমা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি নাগরিক নই বলে ঘোষণা দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে যাব।’

সেন্থিলের মতোই কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পরে আইএএস হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন কান্নন গোপীনাথন। মোদি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে মুসলিমদের উদ্দেশে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বিলটা অমানবিক, অসাংবিধানিক। সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রতিবাদ করার সমস্ত অধিকার রয়েছে।

অনেক সরকারি কর্মকর্তা আবার ‘সত্যাগ্রহ’ও ‘আইন অমান্য আন্দোলন’য়ের ডাক দিয়েছেন। তাই টুইটারে এখন ‘সিএবি-এনআরসি সত্যাগ্রহ’, ‘নো টু সিএবি-এআরসি’হ্যাশট্যাগের ছড়াছড়ি। ইতিমধ্যে ভারতের ৬২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিকও এই বিতর্কিত বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অর্থনীতিবিদ লেখা চক্রবর্তী। টুইটারে নিজেকে ‘মুসলিম’ঘোষণা করে তিনি বলেন ‘আমি মুসলিম। ভারতেই আমার জন্ম। আমি সুরা ফাতিহা জানি। গায়ত্রীমন্ত্রও জানি। কারণ আমার জন্ম ভারতে।’

জেএনইউয়ের ছাত্রনেতা উমর খালিদও জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে, দেশে এনআরসি হলেও নথি জমা দেবেন না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ভারতের সংবিধানের ওপর নীতিগত আঘাত। কিন্তু এনআরসি প্রত্যাহিক জীবনে বিপজ্জনক।’

দীর্ঘ সাত ঘণ্টা বিতর্কের পর সোমবার মধ্যরাতে ভারতীয় পার্লামেন্ট লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস করাতে সক্ষম হন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপন করার কথা রয়েছে। ২৪৫ সদস্যের রাজ্যসভায় বিলটি পাসের জন্য ১২৩ ভোট লাগবে।

ধর্মের ভিত্তিতে আনীত ওই বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে বিলে কিছু বলা হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী ওই তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না।

স্বাভাবিকভাবেই এই বিল আইনে পরিণত হলে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমরা আরো বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়বেন। ফলে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সে দেশের বিবেকবান মানুষ।

Bootstrap Image Preview