নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা মুর্শিদাবাদের একটি রেলস্টেশনে আগুন লাগিয়ে দেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাজারো বিক্ষোভকারী মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন কমপ্লেক্সে আগুন লাগিয়ে দেন। এ সময় স্টেশনে উপস্থিত রেলওয়ে পুলিশের কর্মীদেরও লাঞ্ছিত করেন বিক্ষোভকারীরা।
রেলওয়ে পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হঠাৎ করেই রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকে প্ল্যাটফর্ম, কয়েকটি ভবন ও রেলওয়ে অফিসে আগুন লাগিয়ে দেন। রেলওয়ে পুলিশের কর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে।’
মুর্শিদাবাদ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলায় শুক্রবার বিক্ষোভ হয়েছে। হাওড়ার উলুবেড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ হয়েছে কলকাতাতেও। পার্ক সার্কাস এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। বিমানবন্দরেও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। পূর্ব মেদিনীপুরে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর গাড়িতে হামলা করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গভর্নর জগদীপ ধানকার দুজনেই বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিক্ষোভ করতে হলে গণতান্ত্রিক উপায়ে করার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেছেন, ‘রাজ্যসভায় পাস হলেও পশ্চিমবঙ্গে কোনোভাবেই নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হতে দেওয়া হবে না। এই আইন ভারতকে বিভক্ত করে ফেলবে। যতক্ষণ আমরা ক্ষমতায় আছি, এই রাজ্যের একটি মানুষকেও দেশ ছাড়তে হবে না।’
এদিকে নতুন এই আইনের বিরুদ্ধে আসামে বিক্ষোভ চলছেই। আসাম পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। আসাম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত বলেছেন, ‘আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি। গত কদিনের তুলনায় আজ পরিস্থিতি ভালো ছিল। আমাদের দল নিরলসভাবে কাজ করছে। কঠিন সময় চলছে ঠিকই, তবে আমরাও আমাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছি।’
ব্যাপক বিক্ষোভ ও ধরপাকড়ের পরও বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলে স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষের অনুমোদনের পর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিলটিতে সম্মতি দেন দেশটির রাষ্ট্রপতি।