সদ্য পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন ক্রমেই গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্রসমাজ। পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও। এখন সেই আগুন উত্তর প্রদেশের রাজধানী শহর লখনৌ ও গুরুত্বপূর্ণ শহর আলিগড় হয়ে ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে সারা ভারতে।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে প্রথমে সহিংস হয়ে উঠে আসাম-মেঘালয়সহ ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলো। এরপর, সেই আগুন এসে লাগে পশ্চিমবঙ্গে। এখন তা রাজধানী শহর দিল্লি হয়ে ছড়াচ্ছে লখনৌ-আলিগড়সহ অন্যান্য শহরেও।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, দিল্লিতে সংঘর্ষের পর দেশজুড়ে রাতভর প্রতিবাদ করেছে শিক্ষার্থীরা। নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে আজ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে লখনৌ শহরের নাদওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এনডিটিভি জানায়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সংহতি মিছিলের পর সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের সঙ্গে। গত সন্ধ্যায় দিল্লিতে সংঘর্ষের পর মধ্যরাতেই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে হায়দরাবাদের মওলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে দিল্লির পুলিশ সদর দপ্তরের বাইরে কয়েকশ মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেন।
দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বাসে আগুন দেওয়া অভিযোগ: দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানায় গতকাল দিল্লিতে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে পরিস্থিতি যাতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সেই জন্যে কিছু বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড় এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে বোতল থেকে তরল কিছু ছিটিয়ে দিচ্ছেন এক পুলিশ সদস্য।
এর আগে, দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাগরিকত্ব ‘আইনের প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ করলে সেসময়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। গতকাল সন্ধ্যায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের রাজধানী শহর। রণক্ষেত্রের রূপ নেয় দক্ষিণ দিল্লির নিউ ফ্রেন্ডস কলোনি এলাকা।
ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি বাস ও দুই চাকার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াসহ অনেকেই অভিযোগ করছেন যে পুলিশের কিছু সদস্য এই ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এই ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আন্দোলন এবং জামিয়া মিলিয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মুখর অন্য রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি বম্বে, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, পণ্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদের মউলানা আজাদ জাতীয় উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষ্ণৌয়ের নাদোয়া কলেজ, মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ছাত্রছাত্রীরা জামিয়া মিলিয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন। জামিয়া মিলিয়া, নাদোয়া কলেজ ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধী দলও। দিল্লিতে বিরোধী নেতাদের ডাকা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশি অত্যাচারের নিন্দা করা হয়। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল রোববারের সহিংসতাকে শাসকদলীয় চক্রান্ত মনে করছেন। তাঁর দলের পক্ষ থেকে কিছু ছবি পেশ করে এটা প্রমাণের চেষ্টা হয় যে পুলিশের একাংশও সরকারি বাসে আগুন দিয়েছে। কেজরিওয়াল বলেন, এই ঘটনা নিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতে চান। আম আদমি পার্টি মনে করছে, দিল্লির নির্বাচনের আগে বিজেপির একাংশ আম আদমি পার্টির বদনাম করতে সচেষ্ট।
সোমবারও সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল বের হয় কলকাতায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা।