Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমেরিকার ২১ শতকের ভিয়েতনাম হচ্ছে আফগানিস্তান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৪ AM
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৪ AM

bdmorning Image Preview


তিন মাস স্থগিত থাকার পর আফগানিস্তানের যুদ্ধ বন্ধ করার যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনা স¤প্রতি দোহায় আবার শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানে থ্যাঙ্কসগিভিংস সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেয়ার পর এই আলোচনা শুরু হয়।

ওই সময় তিনি তালেবানের সাথে যুদ্ধবিরতির আহবান জানান। আলোচনা স্থগিত থাকার সময়ও দুই পক্ষ পরস্পরের সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিল।

সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের আলোচনা বাতিল করার সময় দুই পক্ষ একটি চুক্তির কাছাকাছি চলে এসেছিল। ওই সমঝোতা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা, আর তালেবান আশ্বাস দিয়েছিল যে তাদের মাটি যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

 শান্তির বিনিময়ে এ ধরনের আশ্বাস গ্রহণ করার অর্থ ছিল তালেবানের কাছে আফগানিস্তান ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া।

আবার চুক্তি স্থগিত থাকার সময় কাবুলে মার্কিন কমান্ডার জেনারেল অস্টিন মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গত ১২ মাসে দুই হাজার সৈন্য হ্রাস করেছে।

সিনিয়র মার্কিন ক‚টনীতিবিদেরা ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে শান্তি চুক্তির আগে নয়, বরং পরেই মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করা উচিত। আমেরিকানরা দ্রুত বের হলে গেলে আফগানিস্তানে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে, তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপর্যয়কর প্রমাণিত হতে পারে।

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহŸান কাবুলের জন্য ভালো খবর। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তির আগে যুদ্ধবিরতির যেকোনো ধারণা বাতিল করে দিয়েছে তালেবান।

 তালেবানের সাথে আলাদাভাবে আলোচনা করার মার্কিন সিদ্ধান্তে দুর্বল হয়ে যাওয়া কাবুল যুদ্ধবিরতি চায়। তারা তালেবানের সাথে সরাসরি আলোচনা, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং তারপর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার চায়।

তালেবান অবৈধ ক্রীড়নক সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। তালেবান জানে, তাদের ম‚ল শক্তি তাদের আক্রমণ চালানোর সামর্থ্যে। তারা তা ছেড়ে দেবে না।

চরমভাবে নার্ভাস : এদিকে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৭ জন সরকারপন্থী বাহিনীর সদস্য ও ২৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান এই সহিংসতার পাশাপাশি নির্বাচনী সম্ভাবনা উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার ট্রাম্পের বেপরোয়া প্রয়াস কাবুল সরকারকে চরমভাবে নার্ভাস করে ফেলেছে।

আফগানিস্তানের অনন্ত যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তান দোহার শান্তি আলোচনার ব্যবস্থা করেছে, তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা আবার শুরুর জন্য পর্দার অন্তরালে যোগাযোগ করেছে। অক্টোবরে ইসলামাবাদে তালেবানের একটি দলকে স্বাগত জানায় পাকিস্তান।

 একইসময় মার্কিন বিশেষ দ‚তও ইসলামাবাদ সফর করেন। তারা আফগানিস্তানে সহিংসতা হ্রাস ও আবার আলোচনা শুরু নিয়ে আলোচনা করেন।

মনে হচ্ছে, তালেবানের সাথে তাড়াতাড়ি চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এতে আফগান সমস্যা কিন্তু নানামুখী। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সম্ভাব্য শান্তি বজায় রাখতে হলে কয়েক বছর পর্যন্ত আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। আমেরিকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অকার্যকরভাবে ব্যয় হওয়ায় আফগান অর্থনীতি পুরোপুরি বিদেশী সাহায্যনির্ভর হয়ে পড়েছে।

দেশটির সরকারি ব্যয় নির্বাহের জন্য বছরে প্রয়োজন অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার। আর তাদের নিজস্ব সংগ্রহ মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে আন্তর্জাতিক মঞ্জুরি ও সাহায্য খাত থেকে প্রয়োজন হয় ৭৫ ভাগ অর্থের।
কেউ জয়ী নয় : আফগানিস্তান আরেকটি সমস্যায় পড়েছে।

 দুই মাস আগে নির্বাচন হলেও এখন পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে জয়ী ঘোষণা করা হলে বিরোধী প্রার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ফলে নির্বাচন জাতীয় অনৈক্য বাড়িয়ে তোলার শঙ্কা সৃষ্টি করছে।

গতবার ঐক্য সরকার গঠনের পর যে সমস্যায় পড়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবার আমেরিকা এতে জড়িয়ে পড়তে রাজি হচ্ছে না।

এমন এক পরিস্থিতিতে তালেবানের সাথে চুক্তি হলে যুক্তরাষ্ট্র মুখ রক্ষা করে আফগানিস্তান ত্যাগ করার একটি পথ পাবে। কিন্তু তাতে আফগানিস্তানে আরেক দফা গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি হতে পারে। পুরো দেশের ওপর একজনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ওই নৈরাজ্য অব্যাহতই থাকতে পারে।

Bootstrap Image Preview