Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ সোমবার, মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিলামে কেকেআরের জোড়া ইতিহাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩২ AM
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩২ AM

bdmorning Image Preview


রুপির ঝুলি নিয়ে নিলামে বসেছিল আইপিএলে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিজেদের শহরের প্রথমবার নিলামেই জোড়া ইতিহাস গড়েছে শাহরুখ খানের দল। আইপিএল ইতিহাসে বিদেশি ক্রিকেটার কেনার ক্ষেত্রে রেডর্ক খরচ করেছে তারা। সঙ্গে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার কেনার ইতিহাসও গড়ে তারা।

২০১৪তে খেলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সকে ১৫.৫০ কোটি রুপিতে ঘরে তুলে কেকেআর। ২০১৭ নিলামে ১৪.৫ কোটি টাকায় রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টের জালে ধরা দিয়েছিলেন বেন স্টোকস। ইংলিশ অলরাউন্ডারের সেই রেকর্ড ছাপিয়ে সবচেয়ে দামি বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে প্যাট কামিন্সকে ঘরে তুলে ইতিহাস গড়ে নাইট রাইডার্স।

তাছাড়া ৪৮ বছরের লেগ-স্পিনার প্রবীণ তাম্বেকে ২০ লাখ রুপিতে কেনে কেকেআর। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হলেন তাম্বে। প্রথমশ্রেণির ক্রিকেট না খেলেই আইপিএলে সুযোগ পান তিনি। ৪১ বছর বয়সে রাজস্থান রয়্যালেসর হয়ে আইপিএল অভিষেক হয় তাম্বের। ২০১৪ রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে নাইটদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকও করেছিলেন মহারাষ্ট্রের এই লেগস্পিনার। সে বছর সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে পার্পেল ক্যাপ জেতেন তাম্বে। শেষবার আইপিএল খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ২০১৭-তে।

বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএল ইতিহাসে সর্বাধিক দামে বিক্রিত হলেও সবমিলিয়ে কামিন্স রয়েছেন দ্বিতীয়স্থানে। ১৬ কোটি রুপিতে ২০১৫ দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে বিক্রী হওয়া যুবরাজ সিং এখনো পর্যন্ত আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। চোট-আঘাত সমস্যায় প্রথমবার আইপিএলে কেকেআর পরিবারের সদস্য হয়ে সেভাবে নিজের জাত চেনাতে পারেননি অজি ফাস্ট বোলার কামিন্স। এরপর ২০১৭ জার্সি বদল করে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে ১৬ ম্যাচে তার নামের পাশে রয়েছে ১৭টি উইকেট। আর ২০২০ ১৩তম সংস্করণে আবার পুরনো জার্সিতে ফিরে উত্তেজিত প্যাট কামিন্স নিজেও।

নিলামের পর এক ভিডিও বার্তায় উচ্ছ্বসিত টেস্ট ক্রিকেটের একনম্বর বোলার জানিয়েছেন, ‘কেকেআর পরিবারে ফিরতে পেরে ভীষণই উত্তেজিত। আইপিএলে আমার প্রথম দু’বছর এখানেই কাটিয়েছি। ব্যাজের (ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম) প্রশিক্ষণে খেলার তর সইছে না। পাশাপাশি আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনদের সঙ্গে খেলতে পারব ভেবে দারুণ লাগছে।’

কামিন্সকে নিয়ে প্রথমে দর কষাকষি হয় দিল্লি ক্যাপিটালস ও বেঙ্গালোরের মধ্যে। ১০ কোটির পর থেকে দর হাঁকায় কেকেআর। শেষপর্যন্ত ১৫.৫০ কোটিতে কামিন্সকে কেনে কেকেআর। তার ভিত্তি মূল্য ছিল ২ কোটি রুপি।

দামের নিরিখে শীর্ষ পাঁচে আছেন কামিন্স ১৫.৫ কোটি, ম্যাক্সওয়েল ১০.৭৫, ক্রিস মরিস ১০ কোটি, শেলডন কটরেল ৮.৫ কোটি ও নাথান কোল্টার-নাইল ৮ কোটি রুপি।

নিলামে ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসকে ১.৫ কোটি দিয়ে কিনেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। দিল্লি ও কিংস ইলেভন পাঞ্জাবের লড়াইয়ে ম্যাক্সওয়েলের জন্য দর ওঠে ১০ কোটির বেশি। শেষপর্যন্ত ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে অজি অলরাউন্ডারকে নিয়েছে প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব। অজি তারকার ভিত্তি দাম ছিল ২ কোটি।

অ্যারন ফিঞ্চকে ৪ কোটি ৪০ লাখে কেনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর। বিরাট কোহলির সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে দেখা যেতে পারে অজি ওপেনারকে। কেকেআরের সঙ্গে দর কষাকষি করে ফিঞ্চকে কেনে আরসিবি। তারও ভিত্তি মূল্য ২ কোটি।

১.৫ কোটিতে ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে নিয়েছে দিল্লি। নাইটদের সাবেক ব্যাটসম্যান রবিন উথাপ্পাকে টেনেছে রাজস্থান রয়্যালস। উথাপ্পার দাম ৩ কোটি।

নিলামে প্রথমে কেকেআর কেনে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগানকে। ৫ কোটি ২৫ লাখে তাকে নেয় নাইটরা। কেকেআরের সঙ্গে দর হাঁকানোর লড়াইয়ে ছিল দিল্লি। তার ভিত্তিমূল্য ছিল ১.৫ কোটি। রাজস্থান রয়্যালস ৩ কোটিতে কিনেছে আরেক ইংলিশ জস বাটলারকে।

২০২০ আইপিএল নিলামে প্রথমে বিক্রি হন ক্রিস লিন। নাইট রাইডার্সের সাবেক ক্রিকেটারকে ২ কোটি দিয়ে নেয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সাউথ আফ্রিকান অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসকে ১০ কোটিতে দলে টেনেছে বেঙ্গালোর, তার ভিত্তি মূল্য ছিল ১.৫ কোটি।

স্যালুটের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেলডন কটরেলকে কিনেছে কিং ইলিভেন পাঞ্জাব। ক্যারিবীয় এই পেসার কিন্তু প্রীতির দলকে খরচ করতে হয় সাড়ে আট কোটি রুপি। তার ভিত্তি মূল্য ছিল ৫০ লাখ রুপি।

নিখিল নায়েককে নূন্যতম দাম ২০ লাখ রুপিতে কেনে কেকেআর। উইকেটকিপার শাহবাজ আহমেদকে ২০ লাখ রুপিতে নেয় আরসিবি। আর টম কারেনকে ১ কোটিতে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। সাউথ আফ্রিকান পেস ব্যাটারি ডেল স্টেইনকে ২ কোটিতে কেনে কোহলির আরসিব। প্রথমে বিক্রি না হলেও পরে অ্যান্ড্রু টাইকে এক কোটিতে নেয় রাজস্থান রয়্যালস।

৪ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে মার্কাস স্টয়নিসকে কিনে দিল্লি ক্যাপিটালস। দিল্লি ও রাজস্থান ফ্র্যাঞ্চাইজির দর কষাকষির লড়াইয়ে ১ কোটি থেকে প্রায় ৫ কোটিতে পৌঁছে যান অজি অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের ক্রিস জর্ডানকে কিনে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। নূন্যতম ২ কোটিতেই অজি পেসার জশ হ্যাজেলউডকে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস।

৫০ লাখ থেকে ৭ কোটি ৭৫ লাখ। নূন্যতম দামের প্রায় ১৫ গুণ বেশি দিয়ে ক্যারিবিয়ান বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারকে কিনে দিল্লি ক্যাপিটালস। আগেরবার আরসিবিতে খেলেছিলেন তিনি। কেকেআর প্রথমে হেটমায়ারের জন্যে আগ্রহ দেখালেও পরে সরে আসে। তবে তামিলনাড়ুর ব্যাটসম্যান এম সিদ্ধার্থকে ২০ লাখ রুপিতে কিনে কেকেআর।

এক শাহরুখ খান ক্লাব মালিক হলেও নিলামে বিক্রি হননি আরেক শাহরুখ খান। নূন্যতম ২০ লাখ রুপি দর থাকলেও তামিলনাড়ুর ২৪ বছরের এই অলরাউন্ডারের জন্য আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির এই বোলিং অলরাউন্ডার প্রথমবার নিলামে অবিক্রিত থেকে গেলেন।

ভারতের তরুণ পেসার ইশান পোড়েলকে ২০ লাখ দিয়ে কিনে প্রীতির দল পাঞ্জাব। আর ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের অন্যতম ক্রিকেটার যশস্বী জসওয়ালকে ২ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কিনে রাজস্থান রয়্যালস। বিশ্বের কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ফরম্যাটে ডাবলসেঞ্চুরি করেন মুম্বাইয়ের এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।

পেসার বরুণ চক্রবর্তীকে ৪ কোটিতে কেনে কেকেআর। তামিলনাড়ুর ‘রহস্য’ স্পিনারের জন্য গতবারও আগ্রহ দেখিয়েছিল নাইটরা। বিরাট সিংকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে কিনে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। আর রাজস্থান রয়্যালস সাবেক ব্যাটসম্যান রাহুল ত্রিপাঠিকে ৬০ লাখ রুপিতে নেয় কেকেআর। কেকেআরের ‘বাতিল’ লেগস্পিনার পীযুষ চাওলাকে ৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে কিনে চেন্নাই সুপার কিংস।

ভারতীয়দের মধ্যে আগের দুটি নিলামের অন্যতম দামি ক্রিকেটার জয়দেব উনাদকটকে তিন কোটিতে নেয় রাজস্থান রয়্যালস।

নিলামে উঠলেও বিক্রি হননি ভারতীয় টেস্ট দলের দুই ক্রিকেটার হনুমা বিহারী ও চেতেশ্বর পূজারা। দল পাননি ইউসুফ পাঠান, স্টুয়ার্ট বিনিও। তাছাড়া নিউজিল্যান্ড ফাস্ট বোলার টিম সাউদি, ইস সোধি, অ্যাডাম জাম্পা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেডেন ওয়ালস, আফগানিস্তানের জহির খান, ভারতের রোহন কদম, মানজোট কালরা, হারপিত ভাটিয়া, বেন কাটিং, কলিন মুনরো, মার্ক উড, মনোজ তিওয়ারি, কলিন ইনগ্রাম, মার্টিন গাপটিল ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েটও অবিক্রিত।

১৩তম আইপিএলে হাতুরির নিচে উঠেছিলেন ৩৩৮ জন ক্রিকেটার। আগে ৩৩২ জন হলেও পরে আরও ছয়জনকে যোগ করা হয়। যাদের মধ্যে থেকে আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মোট ৭৩ জন ক্রিকেটারকে কেনার কথা ছিল। তবে এদিনের নিলামে মোট ৬২ জনকে কেনে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বাকি ১১ জনের ভাগ্য ঘরোয়াভাবে নির্ধারিত হবে।

Bootstrap Image Preview