Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ রবিবার, মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্রায়ান লারাকে আউট করেছিলেন যে নারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৭ AM
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৩৭ AM

bdmorning Image Preview


অবসরের একযুগ পার হয়ে গেছে। এরপরও জোয়ি গস চান না তার পুরো নামটা কেউ জানুক। একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী কিংবা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ হওয়া জোয়ি নিজের উঠে আসার গল্পটুকু জানাতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেন না। আবার কাউকে পুরো নামটাও বলেন না। পরিচয় জানাতে গেলে শুধু বলেন জোয়ি অথবা গসি।

পুরো নামটা বলতে গেলেই যে অস্ট্রেলিয়ার এমন কেউ নেই তাকে চেনেন না। তখন সবার মানসপটে ভেসে ওঠে, এই তো সেই নারী, যিনি আউট করেছিলেন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারাকে! ২৫ বছর আগের কথা। পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন জোয়ি গস। এরপর থেকে খ্যাতির বিড়ম্বনাই হোক কিংবা নিজেকে লুকিয়ে রাখার তাড়না থেকে, জোয়ি চান না তার পুরো পরিচিতিটা কেউ জানুক।

কেন জানাতে চান না? সেটা জোয়ির মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘২৫ বছর আগে যা হয়েছিল, সেটা ছিল বিস্ময়কর। এরপরই আমি হয়ে উঠি জোয়ি গস। তার আগে আমাকে সবাই জোয়ি অথবা গসি নামেই জানতো।’ ‘পরে যখন ক্রিকেট থেকে অবসর নিলাম, তখন জোয়ি গস নামটা থেকেও বিশ্রাম চাইলাম। চেয়েছি একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হতে, শুধু একজন জোয়ি।’

যতই লুকিয়ে রাখতে চান না কেনো জোয়ি গস, নাম-পরিচিতি থেকে মুক্তি মেলেনি তার। ছোটবেলার ক্রিকেট কোচ গ্লেন মিচেল যেমন বলছেন, ‘জোয়ি গস কোনো সাধারণ নাম নয়। সারাটা জীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হবে এই নামের খ্যাতি কিংবা বোঝা। চাইলে নামটা ঝেরে ফেলা সম্ভব নয়।’

কী ঘটেছিল দুইযুগ আগে? কীভাবে জোয়ি হয়ে উঠেছিলেন জোয়ি গস? সেই কাহিনী জানার আগে জানতে হবে সাবেক অজি নারী ক্রিকেটারের উঠে আসার গল্পটুকুও। সেটা মনে দাগ কেটে ফেলা কোনো উপন্যাসের যে কোনো অংশেই কম নয়!

অন্য আট-দশটা কিশোরীর তুলনায় অ্যাথলেটদের মতো স্বাস্থ্য আর উচ্চতাই জোয়িকে ঠেলে দিয়েছিল ক্রিকেটের দিকে, বলা ভালো অনেকটা জোর করেই। পার্থে দুই ভাইয়ের সঙ্গে সুঠাম দেহের জোয়ি মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন ব্যাট-বল নিয়ে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, এই খেলাটা জড়িয়ে যাচ্ছে তার জীবনের সঙ্গে।

যখন বয়স দশে পড়ল, জোয়ি একজন দলছুট ক্রিকেটার। কারণ, ৮০’র দশকে পার্থে নারীদের বয়সভিত্তিক দলের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। চাইলেও স্কুলে ছেলেদের সঙ্গে খেলা সম্ভব না। কারণ, প্রধানশিক্ষক সেটা পছন্দ করেন না। আবার বয়সের কারণে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলবেন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।

মেয়ের প্রতিভা দেখে বাধ্য হয়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউএ) সঙ্গে যোগাযোগ করন মা ক্যারোল। অনুরোধ জানান, মেয়েকে ভর্তি করিয়ে নিতে। সেখানেই গুরু গ্লেন মিচেলের সঙ্গে পরিচয় জোয়ির। স্পোর্টস সায়েন্সে ডিগ্রীধারী এ কোচ নারী ক্রিকেটারদের তুলে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগামী। ক্রিকেটে মেয়েদের ফিটনেস কতটুকু জরুরী, সেটা ভালোই জানা ছিল তার। জোয়িকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে যায় মিচেলের।

ম্যাচটি ছিল ব্র্যাডম্যান একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশের মধ্যকার। উদ্দেশ্য স্যার ডন ব্র্যাডম্যান জাদুঘরের জন্য তহবিল সংগ্রহ। পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন ডেনিশ লিলি, গ্রেগ চ্যাপেল, মাইকেল হোল্ডিংদের মতো কিংবদন্তিরা। যাদের সঙ্গে খেলার জন্য ডাক পান জোয়ি। অস্ট্রেলিয়ায় কতটা জনপ্রিয় ছিলেন সেটাই যেন প্রমাণ হয়ে যায় সেই ডাকে।

মাঠে বাকিসব কিংবদন্তিকে ছাপিয়ে মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন ব্রায়ান লারা। ক্যারিবীয় ব্যাটিং মায়েস্ত্রো তখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে। ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাসে তখনকার সর্বোচ্চ ৩৭৫, আর ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৫০০ রান লারাকে ঠাই দিয়েছে কিংবদন্তির কাতারে।

এতশত কিংবদন্তির মাঝে জোয়িকে দলে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল নারী দর্শকদের আকর্ষণ করা। একই কারণে দলে ছিলেন অভিনেতা গ্যারি সুইট ও আর্নি ডিঙ্গোর মতো তারকারাও। ম্যাচে সবচেয়ে উত্তেজনাকর মুহূর্ত ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে। ব্যাট হাতে ২৯ করার পর বোলিংয়ে ডাক পান জোয়ি। বল হাতে দেয়ার পর ডেনিশ লিলি তাকে তিন বলের এক কৌশল শিখিয়ে দিলেন, ‘প্রথম দুই বল ইনসুইং করো আর তৃতীয়টি আউটসুইং।’

‘আমি নিজে ব্যাটসম্যান ছিলাম। জানতাম প্রথম দুই বল খেলতে না পারলে তৃতীয় বলটি ব্যাটসম্যান বেরিয়ে এসে মারতে চাইবে।’ লারার বিপক্ষে এই ছিল জোয়ির কৌশল।

সেই ফাঁদে পা দিয়ে বসলেন লারা। তৃতীয় বলে নিজের ট্রেডমার্ক কাভার ড্রাইভ খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক স্টিভ রিক্সনের হাতে হলেন স্টাম্পিং। মাঠে বসা হাজারো দর্শক দেখল, একজন নারী ক্রিকেটারের বলে উইকেট হারিয়ে ফিরছেন তখনকার ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম আলোড়ন তুলে রাখা সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানটি।

পরে পুরোটা সময়জুড়ে দর্শকের উল্লাস শুনে বল করেছেন জোয়ি। আউট করেছেন জেফ্রি ডুজেনকেও। ম্যাচ শেষে যখন সাউথ আফ্রিকান গ্রায়েম পোলককে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করা হল, তখন উপস্থাপককে দুয়ো দিয়েছে দর্শকরা। তাদের চোখে জোয়ি গসই ছিলেন ম্যাচের সেরা।

সেদিনের পর আরও ১২ বছর ক্রিকেট খেলেছেন জোয়ি গস। জিতেছেন ১৯৯৭ বিশ্বকাপ। কিন্তু ওই ম্যাচের কীর্তি পিছু ছাড়েনি তার। ২০০৬ সালে ৩৭ বছর বয়সে ক্রিকেটকে যখন বিদায় বললেন, সিদ্ধান্তটা তখনই নিলেন, আড়াল করতে হবে জোয়ি গস নামটি।

Bootstrap Image Preview