অনুশীলনে বরাবরই অন্য সবার চেয়ে বেশি মনোযোগী বাংলাদেশ জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। হোক জাতীয় দল কিংবা অন্য কোনো টুর্নামেন্টের খেলা, নেট প্র্যাকটিসে সবার আগে আসবেন মুশফিক আর বের হবেন সবার পরে। দেশের ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখা সবার কাছেই এটি পরিচিত দৃশ্য।
ব্যতিক্রম নয় চলতি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়াম লিগেও। মঙ্গলবার খেলেছেন আসরের সর্বোচ্চ ৯৬ রানের ইনিংস, দলকে এনে দিয়েছেন অসাধারণ এক জয়। খুলনা টাইগার্সের পরবর্তী ম্যাচ শুক্রবার। মাঝে দু’দিন সময় থাকায় দলের স্বেচ্ছা অনুশীলনে ছিলেন না তিনি।
যথারীতি বেলা ১১টা বাজতেই ব্যাট-প্যাড পরে সবার আগে চলে আসলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নেটে। প্যাভিলিয়ন প্রান্তের পাশাপাশি দুই নেটে ব্যাটিং করলেন প্রায় এক ঘণ্টা। যাতে মনে ভরেনি বলে ব্যক্তিগতভাবে মিডিয়া প্রান্তে গিয়ে অনুশীলন করেন আরও ২০ মিনিট।
প্যাভিলিয়ন প্রান্তে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির, দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার রবি ফ্রাইলিংকদের বিপক্ষে ছিলেন দারুণ স্বচ্ছন্দ। পাশের নেটে গিয়ে মেহেদি মিরাজ, আমিনুল বিপ্লব, তানভীর ইসলামদেরও খেলেছেন মনের মতো করে। বোঝাই যাচ্ছিলো, দিনদুয়েক আগে ৯৬ রানের ইনিংস খেলার ছন্দটা বেশ ভালোভাবেই ধরে রেখেছেন মুশফিক।
তার নেট সেশন যখন প্রায় ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে যাচ্ছে, তখন হেড কোচ জেমস ফস্টার এসে বলে গেলেন, ‘মুশফিক, (নেটে) আর তিন মিনিট পাচ্ছো তুমি।’ সুবোধ বালকের মতো মুশফিকও আর এক ওভার ব্যাটিং করে নেট ছেড়ে দেন রবি ফ্রাইলিংক, রহমানউল্লাহ গুরবাজদের জন্য।
তাই বলে নেট ছাড়া মানেই যে মুশফিকের অনুশীলন শেষ, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কেননা তিনি নেট ছেড়ে ব্যক্তিগত সহযোগী রবিকে নিয়ে চলে যান মাঠের সেন্টার উইকেটের পাশে। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রায় মিনিট দশেক ফুলটস বলে অনুশীলন করেন নিজের প্রিয় স্লগ সুইপ। একের পর এক হাঁকাতে থাকেন বড় বড় সব ছক্কা।
প্রায় সবগুলো শটই সীমানাছাড়া হচ্ছে দেখে এই পর্ব দীর্ঘায়িত করেননি তিনি। তবে এরপর আবার ঢুকে যানে প্রেসবক্স প্রান্তের নেটে, এবার তার সঙ্গী স্থানীয় এক প্র্যাকটিস বোলার। যার থ্রো-ডাউনে নিজের মতো করে পছন্দের সব শট খেলতে থাকেন মুশফিক। এই সেশন চলে আরও প্রায় ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে।
তার ব্যাট থেকে বেরুনো একটি শট সোজা চলে যায় বোলারের পাশ দিয়ে। যা দেখে রীতিমতো চমকে যান স্থানীয় তরুণ বোলার। সঙ্গে সঙ্গে অভয় দেন মুশফিক, ‘ভয় পেয়ো না, গায়ে লাগবে না।’ কিন্তু মুশফিক যতোই অভয় দেন না কেন, তার একেকটি শটে নির্ভয় থাকার উপায় ছিলো না কোনো।
প্রায় ২০ মিনিট ধরে ধরে একা একা থ্রো-ডাউন করে ক্লান্তি চেপে বসে সেই প্র্যাকটিস বোলারের ওপর। যা বুঝতে পারেন মুশফিক নিজেও। তাই আর দীর্ঘায়িত করেননি এই সেশন। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী ক্লান্ত? শেষ করে দেবো?’ উত্তরের অপেক্ষা করেননি, নিজেই ব্যাট-হেলমেট নিয়ে বেরিয়ে যান নেট থেকে।
এখানেই শেষ নয় মুশফিকের অনুশীলন। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ব্যাটিং সেশনের পর তিনি আবার শুরু করেন কিপিং অনুশীলন। হেড কোচ জেমস ফস্টারের সঙ্গে সতীর্থ শামসুর রহমান শুভকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ করেন ক্যাচিং প্র্যাকটিস। সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনুশীলন পর্ব শেষ করে যখন প্যাভিলিয়নে উঠে যাচ্ছেন, তখন তার মুখে ছিলো তৃপ্তির হাসি। যেনো সবকিছু করতে পেরেছেন শতভাগ নিজের মনমতো।
নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে রংপুর রেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে মুশফিকের খুলনা। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত খুলনা, অন্যদিকে কোনো ম্যাচ জেতেনি রংপুর। শুক্রবার উজ্জীবিত মুশফিকের দলের বিপক্ষে রংপুরের সামনে যে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তা বলে দেয়াই যায়।