Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ বুধবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

আট বক্সবন্দী তুতেনখামেনের মমি খুলতেই উদ্ধারকারীদের মৃত্যু!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৩ PM
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


তুতেনখামেনের মৃত্যু রহস্য আজো রহস্যে ঘেরা। তার অভিশপ্ত মমির রহস্য আজো রয়েছে অধরায়। মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসে প্রখ্যাত ফারাও রাজাদের মধ্যে তুতেনখামেন ছিলেন তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত। তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তার মমি আবিষ্কারের পর।

পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত মমি আবিষ্কৃত হয়েছে তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই চোর-ডাকাতদের হাত পড়েছিল। তবে কিশোর ফারাও তুতেনখামেনের সমাধিটি ছিল অক্ষত। ইউরোপিয়ানদের কাছে তিনি ‘কিং টুট’ নামে পরিচিত। তুতেনখামেন তার জীবদ্দশায় অনেক পুরনো প্রথাকে পাল্টে নতুন প্রথার প্রচলন করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, সৌরদেবের পূজা বন্ধ করে চন্দ্রদেবের পূজার প্রথা প্রচলন।

তুতেনখামেনের মুখোশ

ফারাওয়ের শেষ সম্রাট ছিলেন তুতেনখামেন। যিনি মাত্র নয় বছর বয়সে মিশরের সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার বয়স কম হওয়ায় তার চাচা রাজকার্য সামলাতেন। তার শাসনামলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি ও স্থাপত্যকলায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।  

তুতেনখামেনের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

তুতেনখামেন মাত্র উনিশ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার মমির উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পর জানা যায়- মৃত্যুর আগে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তার মেরুদন্ডের হাঁড় বেঁকে যাওয়ার ফলে তিনি ঠিকভাবে চলাফেরাও করতে পারতেন না। এমনকি তার পায়ের গোড়ালির হাঁড়ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য বেঁকে গিয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা যায় তার মৃত্যু হয়েছিল ম্যালেরিয়াজনিত কারণে।

আবার ১৯৬৮ সালে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেন ভিন্ন তথ্য। তুতেনখামেনের মৃত্যু হয়েছিল না-কি মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে। কারণ তার মাথায় মিলেছে রক্ত জমাট বাঁধার চিহ্ন। স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছিল হত্যা তত্ত্ব। বহুদিন পর্যন্ত সেই তত্ত্বই চালু ছিল। কেউ কেউ অবশ্য এমন বলেন, ঘোড়ার গাড়ি থেকে পড়ে গিয়েই মারা গিয়েছিলেন তুতেনখামেন। গবেষকরা পরে বলেন, হত্যা বা দুর্ঘটনা নয়, গবেষকদের মতে রোগে ভুগেই মারা গিয়েছেন মিশরের কিশোর ফারাও। তুতেনখামেনের কবরে আঁকা ছবিতে দেখা যায়, তুতেনখামেনের নেতৃত্বে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ছবি। যা দেখে অনেকের দাবি, সিরিয়ার যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল তুতেনখামেনের।

২০০৫ সালে জাহি হাওয়াস বলেন, সম্ভবত ম্যালেরিয়ায় ভুগেই মৃত্যু হয়েছিল তুতেনখামেনের। পরে ২০১০ সালে জার্মান গবেষকরা দাবি করেন, তার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব ছিল। ২০১৪ গবেষকরা জানান, যেহেতু প্রাচীন মিশরে ভাই-বোনেদের মধ্যে বিয়ে বৈধ ছিল। হয়তো সেই কারণেই বাবা-মা’র কাছ থেকে রক্তের ওই রোগ পেয়েছিলেন তুতেনখামেন। জন্মসূত্রে পাওয়া সেই রোগ থেকেই মৃত্যু হয় তার। তবে ওই বছরেই ফিরে আসে হত্যা তত্ত্বও। রহস্যের সমাধান এখনো হয়নি।

তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কারে যারা জড়িত ছিলেন

১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর তুতেনখামেনের সমাধিক্ষেত্রে সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন পুরাতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এবং তার সঙ্গী লর্ড কারনাভান। বহু চেষ্টা করে ১৯২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তারা দরজাটি ভাঙতে সক্ষম হলেন। অ্যান্টি-চেম্বারে সোনার তৈরি একটি বড় বাক্স ছিল। তার ভেতর ছিল একই রকম অপেক্ষাকৃত ছোট আরো তিনটি বাক্স। চতুর্থ বাক্সটি ছিল মূলত হলুদ স্ফটিকমণির তৈরি একটি কফিন। কফিনটির ভেতরে একই রকম আরো তিনটি কফিন পাওয়া গেল। 

শেষ কফিনটি ছিল সোনার তৈরি এবং তার ওজন ছিল প্রায় ১৩৫ কিলোগ্রাম। চতুর্থ কফিনটির ডালা খুলে প্রত্নতত্ত্ববিদদ্বয় আবিষ্কার করলেন ফারাও তুতেনখামেনের মমিকৃত দেহ। মৃত ফারাওর মাথা ও কাঁধ ঢাকা ছিল একটি চমৎকার স্বর্ণের মুখোশে। তার বুকের উপর পড়ে ছিল কিছু শুকনো ফুল। তারা তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কার করেন ঠিকই কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে লেখা একটি অভিশাপ খুঁজে পান। সেখানে লেখা ছিলো ‘রাজার শান্তি ভঙ্গকারীদের মৃত্যু ঘটবে’।

তুতেনখামেনের অভিশাপ

তার কবর যে ঘরে পাওয়া যায় ঠিক তার পাশের ঘরটি ছিলো ধন সম্পদে ভরপুর। আর সেখানেই তার কবরে সাঁটানো সিলমোহরের যে ছাপ ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি পাওয়া যায়। আর সেটির উপরেই লেখা ছিল তুতেনখামেন। ১১ নভেম্বর ১৯২৫ সালে যখন হাওয়ার্ড কার্টার তুতেনখামেনের কফিনটি খোলেন, তার ভিতরে অনেকগুলো বাক্স ও তিনটা কফিনের মধ্যে পাওয়া যায় মমিটি। এর মধ্যে দুইটি কফিন কায়রো জাদুঘরে আছে। কবরের মধ্যে পাওয়া যায় ৫ হাজার ৩৯৮ টি হাতের কাজ করা জিনিস।

তার কবর খুঁজে পাওয়ার আগ অব্দি মিশরে তার কনো চিহ্ন ছিল না। তার কবরের দেয়ালে আঁকা ছবিগুলোতে তাকে দেখা যায়, একজন শিকারি হিসেবে, একজন রাজা যুদ্ধের মায়দানে, একজন মানুষ যে তার স্ত্রী সেনামুন এর গভীর প্রেমে মত্ত। সেনামুন ছিল নেফেরতিতির মেয়ে। কিং টুটের মমি আবিষ্কারের পর থেকে একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় প্রত্যেকেরই রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। সব নাকি তুতেনখামেনের মমির অভিশাপ। তার কবরে কাজের সময় হাওয়ার্ড কার্টারের সঙ্গে ছিলেন কানারি।

যেদিন হাওয়ার্ড কাটার এবং কারনামুন তুতেনখামেনের কবরে ঢুকে শ্রমিকরা কানারিকে মৃত দেখে। বলা হয়, কানারি কোবরা সাপের কামড়ে কারণে মারা গিয়েছিল। কোবরা সাপ হচ্ছে ফেরাউনদের মুখোশের শিখরের প্রতীক। এখান থেকে শুরু হয় তুতেনখামেনের অভিশাপ। কাকতালীয়ভাবে কবরের কক্ষ খোলার ছয় সপ্তাহ পর লর কারনারভনকে তার হোটেলের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে একে একে মৃত্যু হয় কবর খোড়ার কাজে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। 

এভাবে তুতেনখামেনের অভিশাপের জন্ম হয়। পরে অবশ্য এর একটি যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা সামনে আসে। আর তা হলো, তুতেনখামেনের অভিশাপ জাদু নয় বরং জীবাণু। যখন তারা কবরে ঢুকেছিল তখন হাজার বছরের পুরনো বিষাক্ত জীবাণুর কারণেই উপস্থিত ব্যক্তিদের একে একে মৃত্যু হয়। এই তত্ত্ব ঠিক কি না তা পরীক্ষা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে জীবণুবিদরাও আসেন। তবুও সেই রহস্য আজো অধরায় রয়ে গেছে।

Bootstrap Image Preview