সাম্প্রতিক সময়ের রেল দুর্ঘটনা এবং জীবনহানি হৃদয়ে নাড়া দিয়েছিল শামীম রেজাকে। এরপরই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে প্রাণরক্ষায় প্রযুক্তির উদ্ভাবনে নেমে পড়েন তিনি। অবশেষে উদ্ভাবন করেন এক নতুন প্রযুক্তি।
বুধবার নাটোরের বাগাতিপাড়ায় তিন দিনব্যাপী শুরু হওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় তার উদ্ভাবিত এই নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল এ মেলার উদ্বোধন করেন।
শিক্ষার্থী শামীম তার এই প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন ‘অটোরেল ক্রসিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম’।
শামীম উপজেলার কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
শামীম তার প্রযুক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশে রেল দুর্ঘটনার হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের বিন্দুমাত্র ভুলের কারণে ঘটছে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা । সম্প্রতি একটি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার কারণে অনেক মানুষ মারা গেছে। ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি জেনেছেন, সেখানকার সিকিউরিটি গার্ড রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল, যার কারণে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে এবং অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্ঘটনা থেকে মানবজীবনকে রক্ষার জন্য তার এ আবিষ্কার।
তিনি বলেন, তার উদ্ভাবিত এই ‘অটো রেলক্রসিং অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম’স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাজ করবে। স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি ইন্ডিগেটর থাকবে। যখন ট্রেন আসবে তখন রেলটি দুই কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় একটি সিগন্যাল দেবে এবং সঙ্গে সঙ্গে রেল গেটের ক্রসবারটি নেমে যাবে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর যখন ট্রেনটি রেল-গেট অতিক্রম করে চলে যাবে, তখন দুই কিলোমিটার যাওয়ার সংকেত পেয়ে ক্রসবারটি পুনরায় উঠে যাবে। এভাবে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। একাজে কোনো মানুষের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও স্টেশনের ল্যাম্পপোস্ট ও লাইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি সার্কিট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
এছাড়াও একটি ‘পেলটিএস্টার’ থাকবে যেখানে স্বল্পতাপে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া যাবে। যাতে সৌর প্যানেল বা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কম খরচে বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এই বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা হবে। আর একটি পাওয়ার আপ সার্কিট অর্থাৎ ‘ডিসি’ কে ‘এসি’ তে স্থানান্তর করে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করবে। যা দিয়ে পুরো রেলস্টেশনের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, তার এই প্রজেক্ট বা স্টেশনে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে বা ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। সে কারণে তিনি স্টেশনের কন্ট্রোল রুমকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য একটি নিরাপত্তা সার্কিট তৈরি করে এই প্রযুক্তিতে যুক্ত করেছেন। কেউ কন্ট্রোল রুমে প্রবেশের চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা এলার্ম বা সংকেত বেজে উঠবে। এলার্ম পেয়ে স্টেশনের নিরাপত্তার পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া যাবে। এভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ হবে।
শামীম রেজা বলেন, পুরো প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনে তাকে তার কলেজের বিজ্ঞানের শিক্ষক আনোয়ারুল আল আযম এবং চার সহপাঠী আমেনা খাতুন, সুমাইয়া আক্তার, অভিজিৎ সাহা ও যুবরাজ কুমার সহযোগিতা করেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে খুব বেশি খরচ হবে না। স্বল্প খরচের এই প্রযুক্তিটি তিনি দেশের কল্যাণের জন্য সরকার বা রেল বিভাগকে দিতে চান।
এ বিষয়ে ওই কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক আনোয়ারুল আল আযম বলেন, শিক্ষার্থী শামীম রেজা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার উদ্ভাবনের নেশা রয়েছে। ভবিষ্যতে শামীম আরও ভালো কিছু উদ্ভাবনে কাজ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।