Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শনিবার, মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুগ্ধর ‘লোহার জুতো’ ভাঙার গল্প

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৯ AM
আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৯ AM

bdmorning Image Preview


রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শীতলগাড়ি গ্রামের মেয়ে মমতাজ বেগম বিথী। তার প্রথম সন্তান ৭ দিনের মাথায় মারা যাওয়ায় চাননি আর মা হতে। যদিও দুই বছর পর, ২০০০ সালের ৩০জুন দ্বিতীয় সন্তান জন্ম দেন। নবজাতক শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয় ৪০ দিন। সন্তানের বয়স তিনে পৌঁছাতেই দুই পা বাঁকা হয়ে মুড়িয়ে যেতে শুরু করে। ডাক্তার পরিয়ে দেন লোহার জুতো। জানিয়ে দেন শুধু হাঁটা যাবে, দৌড়াতে গেলে বরণ করতে হতে পারে পঙ্গুত্ব। যার পৃথিবীতে আসাই ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধতায় ভরা, খেলতে ছিল মানা, সেই ছেলেটিই আজ প্রবল সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার, গতিময় পেস বোলার মুকিদুল ইমলাম মুগ্ধ। ইনসেপ্টা রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএলে ১৯ বছরের এ তরুণ পেস-স্লোয়ারে ছড়িয়ে চলেছেন মুগ্ধতা।

দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচার নিয়েও মাঠে লড়ে যাওয়া মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এক বিস্ময়ের নাম। খেলোয়াড়ি জীবনের মাঝপথে বারবার তাকে বাধার মুখে ফেলেছিল চোট। মুগ্ধ বাধায় পড়েন ক্রিকেট খেলা বোঝার আগেই!

দুই বছর ভার বহনের পর খোলা হয় লোহার জুতো। সুস্থ হয়ে ওঠেন মুগ্ধ। ফুটবলার বাবা জাহিদুল ইসলাম চাননি কোনোরকম ঝুঁকি নিতে। খেলাধুলা থেকে দূরেই সরিয়ে রাখেন একমাত্র ছেলেকে। ক্লাস ফাইভে ওঠার পর মুগ্ধ মজার ছলেই ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। এজন্য বাবার হাতে মার খেতে হয়েছে অনেকবার! ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক তাতে কমেনি, বেড়েছে বরং দিন দিন।

মুগ্ধ তখন ক্লাস নাইনের ছাত্র। টেপ টেনিস বলের খেলায় হাত পাকিয়ে ফেলেছেন। একদিন খবর পান রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে হবে বিকেএসপিতে ভর্তির ট্রায়াল। আগ্রহ জাগে নিজেকে বাজিয়ে দেখার। প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের অনুরোধে বাবার মন গলে, ট্রায়ালের দিন মুগ্ধকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যান জাহিদুল ইসলাম। প্রাথমিক ট্রায়াল, ক্যাম্পে টিকে যাওয়ার পর মুগ্ধ ভর্তি হন সাভার বিকেএসপিতে। বয়সভিত্তিক সব ধাপ পেরিয়ে ১৯ বছরের এ তরুণ বিপিএল খেলছেন ইনসেপ্টা রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে। গতি ও স্লোয়ারে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা, শুরু হয়েছে বড় স্বপ্নের পথে যাত্রা।

জেলা মাঠে ট্রায়াল হয়েছিল হকি খেলার বল দিয়ে। এক মাসের ক্যাম্পে যোগ দিয়ে প্রথম ক্রিকেট বল দেখেন মুগ্ধ, ‘ক্রিকেট বল প্রথম দেখেছি, ধরেছি ক্যাম্পে এসেই। ট্রায়ালের নেটে বল করিয়েছে হকি বল দিয়ে। তখন তো বুঝতাম না এতটা। আমি একদম গ্রাম থেকে আসা একটা ছেলে অতটা জানতামও না। পরে আস্তে আস্তে এক মাস, দুই মাস ক্যাম্প করলাম। তখন ব্যাটিং করতাম, ব্যাটিং ভালো ছিল। বিকেএসপিতে ৪০ ওভারের একটা ম্যাচে ১৫ বলে ৪৬ করেছিলাম।’

‘রুশো স্যার বলেছে ব্যাটিং মাঝেমাঝে, বোলিংয়ের দিকে বেশি জোর দাও। তখন গতি ছিল। লাইন-লেন্থ হয়ত খারাপ ছিল, কিন্তু গতিটা ছিল। উনি হয়ত সেটা বুঝেছেন। তারপর ওনার কাছ থেকেই শেখা পেস বোলিংটা। অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯, এ পর্যন্ত খেললাম ৪ বছরের মধ্যে। ইনজুরির কারণে যুব বিশ্বকাপ খেলতে নিউজিল্যান্ড যেতে পারিনি। খেলার বাইরে ছিলাম একটা বছর। এ বছর প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগের পর এখন বিপিএল খেলছি।’
পেস বোলাররা সাধারণত ফিল্ডিংয়ে খুব বেশি দক্ষ হন না। কথিত আছে ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে কিছুটা গাঁ বাঁচিয়েই খেলতে হয় তাদের। কিন্তু মুগ্ধ ব্যতিক্রম। বোলিং-ব্যাটিংয়ের চেয়ে ভালো ফিল্ডিং করেই বেশি পুরস্কার জিতেছেন যুব দলে এসে। বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ওপেনার সৌম্য সরকারকে সাজঘরে পাঠান লংঅনে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েই। ফিল্ডিং, ক্যাচিংয়ে দক্ষ হয়ে ওঠার পেছনে কোচেরই পুরো অবদান।

‘অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আমাদের অনেক ফিল্ডিং অনুশীলন করা হয়েছে। মোর্ত্তজা স্যার ড্রিল করাতেন অনেকক্ষণ ধরে। তিনি উৎসাহ দেয়ার জন্য নিজের টাকা থেকে ৫০, ১০০ করে দিতেন আমাদের। আমার টার্গেট থাকত ফিল্ডিংয়ে ভালো করব আর তার কাছ থেকে টাকা নেব। সাত-আটবার পেয়েছিলাম ৫০, ১০০ টাকার নোট। আম্মুর কাছে জমা রেখেছি আলাদা করে। ম্যাচে ভালো ক্যাচ, ফ্লাই করে ক্যাচ ধরলে বা ছয় সেভ করে উপহারগুলো পেয়েছি।’

‘এসবে (ফিল্ডিংয়ে ঝুঁকি) আমার খেয়াল থাকে না। খেলাটাকে সিরিয়াসলি নেই। ফিল্ডিং করব ফিল্ডিংয়ের মতো, বোলিং করব বোলিংয়ের মতো, যদি ব্যাটিং করি ব্যাটিংয়ের মতো। মাঠে কী হবে ওটা আমার মধ্যে নেই। ইনজুরিতে পড়লে পড়ব। আমার কথা হল, যদি দুই বছর খেলি বাঘের মতো খেলব। খেলব খেলার মতো, যাতে কেউ বলতে না পারে এই খেলোয়াড়টা খারাপ।’

Bootstrap Image Preview