জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে রান আছে প্রচুর। বলের বাউন্স তেমন হেরফের না হওয়ায় ব্যাটসম্যানদের জন্য এটি ব্যাটিং স্বর্গ। রান খরচের ভয় কমিয়ে দিয়েছে স্পিন-নির্ভরতা। তাই তাইজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আরাফাত সানি, নাঈম হাসানদের একাদশে জায়গা পাওয়াই হয়ে গেছে কঠিন।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে লড়াইটা হচ্ছে মূলত ব্যাটসম্যান ও পেসারদের মধ্যে। সেই অর্থে এবারের বিপিএলকে ব্যাটসম্যান-পেসার লিগও বলা যেতে পারে। স্পিনাররা এখানে নস্যি। তারা গণ্য হচ্ছেন ‘সৎ ভাই’ হিসেবে। অথচ পেস বোলারদেরকেই এতদিন এই চরিত্রে দেখে এসেছেন দর্শক।
স্পিন বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান নেই বিপিএলে। গত আসরে সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকারির আফসোস হয়ত বেড়ে যাবে দেশের বাকি স্পিনারদের হাল দেখে! ৪৬ ম্যাচের মধ্যে এরই মধ্যে মাঠে গড়িয়েছে ১৬টি ম্যাচ। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির ১৫ জনের তালিকায় নেই কোনো বাংলাদেশি স্পিনারের নাম। বিদেশিদের মধ্যে একমাত্র আফগান অফস্পিনার মুজিব উর রহমান ৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে আছেন নবম স্থানে। তার উপরের সারির সবই পেস বোলার।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানা ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে আছেন এক নম্বরে। একই দলের রুবেল হোসেন তার পরেই (৬ ম্যাচে ৮ উইকেট)। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের সৌম্য সরকার ৪ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে। দেশের স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট রাজশাহী রয়্যালসের লেগ স্পিনার অলক কাপালির। সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েও খুব একটা ভাল করতে পারেননি নাসুম আহমেদ (৬ ম্যাচে ২ উইকেট) ও মেহেদী হাসান (৪ ম্যাচে ২ উইকেট)। মেহেদী হাসান মিরাজ চার ম্যাচের তিনটিতে বোলিং করে পাননি কোনো উইকেট। তাইজুল ও আমিনুল দুটি করে ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
তিন ম্যাচে ১টি করে উইকেট সানি ও সানজামুল ইসলামের। সঞ্জিত দুই ম্যাচে ৩টি, নাঈম তিন ম্যাচে ২টি এবং নাজমুল ইসলাম অপু চার ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট। বিপিএলে স্পিনারদের চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেছে অনেক। কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। রংপুর রেঞ্জার্সের তরুণ অফস্পিনার সঞ্জিত সাহা আশায় আছেন বিপিএল ঢাকায় ফিরলে পাল্টে যাবে বাস্তবতা।
‘হয়ত এমনটা পিচের কারণে, কন্ডিশনের কারণে হচ্ছে। চট্টগ্রাম পেস বোলিং কন্ডিশন, স্পিন অতটা টার্ন করে না। প্রতিটা দলেই পেসার বেশি খেলানো হচ্ছে। স্পিনারদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং এসব উইকেটে বল করা। যে স্পিনারই চট্টগ্রামে বল করে সবাই খুব সতর্ক থাকে। মিরপুরে হয়ত স্পিনারদের জন্য সহায়ক থাকে। চট্টগ্রামে সেটা কম। সব স্পিনাররাই তাতে একটু হতাশ।’
প্রায় সব দলই স্বীকৃত তিন পেসার নিয়ে খেলছে চট্টগ্রামের মাঠে। ঢাকা প্লাটুনের সম্ভাবনাময় তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ এটিকে দেখছেন বড় সুযোগ হিসেবে। ‘পেসাররা ডমিনেট করছে। পেস বোলাররা সবাই ভালোই করছে। পেস বোলারদের দিকেই নজর দিচ্ছে সবগুলো দল। তাতে আমাদের ভালো করার সুযোগ বাড়ছে।’
এবারের বিপিএলে তিন তরুণ পেসার নির্বাচকদের দৃষ্টি কেড়েছেন। তাদের একজন হাসান মাহমুদ। বাকি দুই বোলার মেহেদী রানা ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। আর স্পিনে প্রাপ্তির খাতা শূন্য। পুরনোরাই তো পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছেন না!