রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতি বছর বড় করে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তার বক্তব্য শোনার পর তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্যে সাংবাদিকদের ডাকা হয়। কিন্তু প্রশ্ন করার জন্য চাকরি হারিয়েছেন একজন টেলিভিশন সাংবাদিক।
চাকরি হারানো ওই সাংবাদিকের নাম অ্যালিসা ইয়ারাভস্কিয়া। তিনি রাশিয়ার ইয়ামাল এলাকার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাংবাদিক। পুতিনের মুখপাত্র ডিমিত্রি পেসকভই ঠিক করে দেন কোন সাংবাদিক প্রশ্ন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মাইক অ্যালিসার পাওয়ার কথা ছিল না।
কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে টানা চলছে বক্তৃতা এবং প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলার এক পর্যায়ে মাইক হাতে পান অ্যালিসা। যদিও মাইক্রোফোনটি যাওয়ার কথা ছিল একই চ্যানেলের অন্য এক সাংবাদিকের কাছে।
তবে হাতে মাইক পেয়ে অন্য আর সব সাংবাদিকের মতো প্রশ্ন শুরু করলেন অ্যালিসা। বৈশ্বিক উষ্ণতা ইয়ামাল এলাকার জন্য কতটা সৌভাগ্য বয়ে আনছে সে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেন তিনি।
এর ফলে আর্কটিক সাগরের বরফ গলে যাচ্ছে আর তাতে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু একটি সেতু নির্মাণে অনেক দেরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন অ্যালিসা।
তিনি বলেন, শহরের গভর্নর এই ব্রিজকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি করছেন না। কিন্তু আমরা শুনতে পাচ্ছি সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি কম গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বড়সড় উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা?
পুতিনের উত্তর ছিল- শুধু একটি প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে বাছাই করা কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য বেমানান হবে। এই ব্রিজটি আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় খুব গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করবে, সে বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল আছেন এর দিকে বাড়তি মনোযোগ দেয়া হবে।
কিন্তু ওই প্রশ্ন করার পর কেন চাকরি হারাতে হলো অ্যালিসাকে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তার এই প্রশ্নে নাখোশ হয়েছে ইয়ামাল অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ।
আর তার টেলিভিশন চ্যানেল তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে কারণ যে সাংবাদিককে প্রশ্ন করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল তাকে তিনি মাইক্রোফোনটি না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করছেন।
আর তাছাড়া যে চ্যানেলে তিনি কাজ করেন সেটি স্থানীয় প্রশাসনের মালিকানাধীন। অন্যদিকে আরেক রিপোর্টে বলা হচ্ছে- সংবাদ সম্মেলনে তোলা পুতিনের একটি ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন অ্যালিসা। যেখানে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন পুতিনকে কেমন দেখাচ্ছিল?
অ্যালিসা লিখেছিলেন, আমি কোনও বোটক্সের চিহ্ন দেখছি না। তাকে (পুতিন) দেখে তার বয়সের মতোই মনে হচ্ছে। চেহারায় বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য ‘বোটক্স’ খুব জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি।
পরে অবশ্য ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন অ্যালিসা। রাশিয়াতে সাংবাদিকেরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা পান না বা অনেক সময় তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কিন্তু অ্যালিসা ঠিক কী কারণে চাকরি হারালেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। তিনি নিজে অবশ্য বলেছেন, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি বরং তিনি পদত্যাগ করেছেন।