ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য মুসলিমদের দায়ী করে তাদের সম্পত্তি জব্দ করে তা নিলামে তুলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের সরকার।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, খোদ উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ‘বদলা’ নেওয়ার হুমকি এবং তাদের সম্পত্তি জব্দ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ।
এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার এই ‘বদলা’ নেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরই মুজফফরনগর জেলায় কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে অন্তত ৭০টি দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এসব দোকানপাটের প্রায় সবগুলোরই মালিক মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। মুজফফরনগর উত্তর প্রদেশের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন ও প্রস্তাবিত নাগরিক তালিকা-এনআরসির বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনে বিজনৌর, সম্ভল, লক্ষ্ণৌ, মুজফফরনগরসহ এই রাজ্যের বহু এলাকা প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল। এর ফলে নষ্ট হয়েছে ট্রেন, বাসসহ বহু সরকারি সম্পত্তিও।
সিএএ ঘিরে এযাবৎ ভারতে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভকারীর মৃত্যুও হয়েছে উত্তরপ্রদেশেই। এখানে ১৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। বিক্ষোভ দমাতে গুলিবর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে রাজ্যের পুলিশ।
এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশ সরকার জানিয়েছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বিক্ষোভকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দোকানপাট ও সম্পত্তি জব্দ করবেন, যাতে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ক্ষতি সেখান থেকে পুষিয়ে নেওয়া যায়।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- সরকারি সম্পত্তি যারা ভাঙচুর করেছেন বা আগুন ধরিয়েছেন, হামলাকারীদের সম্পত্তি নিলাম করেই সেই অর্থ উশুল করা হবে।’
‘এই উপদ্রবী বা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিশোধ নেব’ এ বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
যোগী আদিত্যনাথের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে এইচআরডব্লিউ’র দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘প্রথমত সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দোকানপাট সিল করে দিতে পারে না।’
‘দ্বিতীয়ত, একজন মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে বদলা নেওয়ার কথা বলতে পারেন? রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব। তিনি আইনের কথা বলবেন, তার মুখে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা কোনোমতেই শোভনীয় নয়’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে মানবাধিকার কর্মীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ সরকার ঘোষণা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুজফফরনগরে নাসিম আহমেদের ছেলে ইনাম ইলাহীর দোকান ‘ওপি এন্টারপ্রাইজ’ ক্রোক করে পুলিশ সেখানে নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার অপরাধে ইনাম ইলাহীকে সাত লাখ রুপিরও বেশি জরিমানা করা হয়েছে। এই অর্থ আদায় করা হবে তার দোকান ও সম্পত্তি নিলামে তুলে।’