চাকরিচ্যুত করায় বৃদ্ধ ব্যবসায়ী তোবারক হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে খুন করতে হত্যাকারীরা ঢাকার বাইরে থেকে দু’জনকে ভাড়া করে। মৃত তোবারকের বাসায় কাজের লোক হিসেবে কৌশলে পাঠানো হয় এক খুনিকে। এরপর ঘুমন্ত তোবারককে খুন করে আলমারি ভেঙে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় খুনিরা।
গত ২৫ ডিসেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের নিকেতনে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ তোবারক হোসেন। এ ঘটনার চারদিন পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ খুনের মোটিভ। আজ (২৯ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মো. গোলাম রাব্বী, মো. বাবুল প্রধান ওরফে বাবু, মো. সোহেল প্রধান, মো. ইমন হোসেন ওরফে হাসান ও মো. আলামিন খন্দকার ওরফে রিহান। এসময় তাদের থেকে দুই লাখ ৪২ হাজার টাকা ও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ রক্তের দাগযুক্ত ৩টি চাকু, খেলনা পিস্তলের (লাইটার) দুটি কভার, রক্তমাখা স্কচ টেপ, রক্তমাখা দড়ি ও শাবল উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে শাহীন ও শিহাব নামের দুইজন কেয়ারটেকার তোবারক হোসেনের ব্যবসা দেখাশোনা করতো। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় শাহীনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন নিহত তোবারক। তখন থেকে শাহীনের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায় কীভাবে তোবারককে হেনস্তা করা যায়।
সোহেল নামে একজনকে শাহীন জানায়, তোবারক ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর টাকা বাসায় রাখেন। তারা সিদ্ধান্ত নেয় বাসা ডাকাতি করে ওই টাকা লুট করবে। এজন্য তারা চাঁদপুর থেকে চারজন ও কুমিল্লা থেকে একজন লোক ভাড়া করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা ইমন নামে একজনকে তোবারকের বাসায় কৌশলে কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। কৌশল হিসেবে সাবেক কেয়ারটেকার (১০ বছর আগে মারা গেছেন) মোহাম্মদ আলী’র পুত্র সাজিয়ে ইমনকে ‘হাসান’ নাম দিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর তোবারকের বাসায় কাজের উদ্দেশ্যে পাঠায়। পুরনো সম্পর্কের কথা ভেবে ইমন ওরফে হাসানকে তোবারক তার বাসায় কাজের জন্য রেখে দেন।
ঘটনার দিন বাসার দারোয়ান ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যান। এসময় ইমন এপার্টমেন্টে ঢোকার গলির মুখ থেকে রাব্বী, বাবু, রিমন, সিহাব ও হৃদয়কে তোবারকের ৪ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে তার রুমে রাখে। শাহীন ও সোহেল এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বাইরের রাস্তায় অবস্থান নেয়। ইমন (হাসান) ও অন্যান্যরা ছুরি, স্কচ টেপ ও দড়ি নিয়ে তোবারকের শয়নকক্ষে ঢুকে ঘুমন্ত তোবারক হোসেন ও তার সহকারী সাইফুলকে বিছানার সঙ্গে চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে দুজনের হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে চোখে-মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে দেয় এবং ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
এক পর্যায়ে তোবারক হোসেন নিস্তেজ হয়ে গেলে আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে বাসায় থাকা শিল (মসলা বাটার জন্য ব্যবহৃত প্রস্তর) ও সঙ্গে নিয়ে যাওয়া শাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে নগদ টাকা লুট করে তারা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারা প্রথমে নর্দায় ইমন ও রিমনের মেস বাসায় গিয়ে টাকা ভাগ করে এবং পরে সবাই ঢাকার বাইরে চলে যায়।