বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি অত্যধিক উন্নত। দিনদিন এর উন্নতি আরও সাধিত হচ্ছে। আগে মানুষ তারযুক্ত ল্যান্ডফোন ব্যবহার করতো। এখন আর সেই ফোনের ভাত নেই। চলে আসলো তারহীন মুঠোফোন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশ্বের শেষ প্রান্তে ফোন দিলে রিয়েল টাইমে কথা বলা যায়। কল রেকর্ড করা যায়। ভিডিও কলে কথা বলার সাথে দৃশ্যও অবলোকন করা যায়। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে কোনো স্থানের ছবি তোলা যায়। ভয়েস বার্তা সংরক্ষণ করে রাখা যায়। এছাড়া আরও কতশত অভাবনীয় প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে সেই হিসাব জানা নেই।
এই প্রযুক্তির আদ্যপ্রান্ত ধারণা সামনে রেখে কুরআন খুলে সুরা যিলযাল যখন আপনি পড়তে শুরু করবেন তখন আপনি হতচকিত হয়ে যাবেন। নড়ে উঠতে বাধ্য হবেন। শরীরে একটা ঝাঁকুনি অনুভব করবেন, যদি পরকালের ভয় সত্যিই থেকে থাকে। পড়তে পড়তে যখন ৪ নম্বর আয়াতে আসবেন—
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
‘সে দিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’
তখন সবকিছু একদম বাস্তব মনে হবে। কীভাবে জমিন সাক্ষ্য দিবে? এমন প্রশ্ন মনে উদিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রযুক্তি সম্পর্কে যাদের কিছুটা ধারণা আছে তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হবে। আজকের মানবসৃষ্ট প্রযুক্তিতে যদি এত এত অকল্পনীয় সুবিধা থেকে থাকে তাহলে যিনি এই মানুষসহ যাবতীয় কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রযুক্তিতে কি না থাকতে পারে?
আমরা যেখানেই যাই, যা কথা বলি এবং যে কাজই করি না কেন, সবকিছু জমিন রেকর্ড করছে। ঘরের মেঝে, সিলিং, দেয়াল, ছাদে আমাদের কথা সংরক্ষিত। বাতাসে স্টোরেজ করা আছে আমাদের আলাপচারিতা। পথঘাটের পরিবেশ এবং স্থান স্থাপনা আমাদের ক্লোজ মনিটরিং করছে। আজকের সিসি টিভি প্রযুক্তি এই ব্যাপারটি আরও খোলাসা করে দেয়। মানবসৃষ্ট সিসি টিভি ক্যামেরার লেন্স যে দিকে তাক করা থাকে সে দিকের তথ্য কালেকশন করতে পারে। আর আল্লাহর সিসি টিভির লেন্স প্রতি ইঞ্চি জায়গায় সেট-আপ করা। নিজেকে তা থেকে আড়াল করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। প্রতিটি বালিকণা একটা একটা সিসি টিভি। দুই কাঁধে দুজন তো আছেনই।
বিচারের দিনে মহান রব যখন জমিনকে তাদের কাছে সংরক্ষিত তথ্য ফ্ল্যাশ করতে নির্দেশ দিবেন তখন জমিন সব প্রকাশ করে দিবে। স্থান, কাল, সময়সহ উল্লেখ করবে। স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্র এবং অডিও প্রকাশ করা হবে। আল্লাহ কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামি বান্দাদের সামনে সেগুলো প্লে করবেন। বলবেন, ‘দেখো তো, এগুলো তোমাদের কি না।’ তখন বান্দারা তাদের পুরো জীবনের প্রতিটি পার্টের পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং অবিকল প্রামাণ্যচিত্র দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাবে।
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এ আয়াত পাঠ করলেন ‘সে দিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’ তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জানো জমিনের বৃত্তান্ত কি?’ তারা বললেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসুলই বেশি জানেন।’ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘তার সংবাদ হলো, তার বুকে প্রত্যেক নর-নারী যা কিছু করেছে সে তার সাক্ষ্য দিবে। দুনিয়া বলবে, সে তো অমুক অমুক দিন এই এই কাজ করেছে। এটাই হলো জমিনের বৃত্তান্ত।’ [তিরমিজি, আসসুনান : ৩৩৫৩]