এটা আর দশটা সংবাদ সম্মেলনের মতোই ছিল। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার রেকর্ড গড়লেন রস টেলর, তার এই প্রাপ্তি-কীর্তি নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। টেলরের মুখে থাকার কথা ছিল চওড়া হাসি।
সেই হাসি শুরুতে ছিলও। কিন্তু হঠাৎ তার মুখটা অন্ধকার হয়ে উঠলো। শুধু অন্ধকার হয়ে উঠলো না, বাচ্চাদের মতো রীতিমত কাঁদতে শুরু করলেন কিউই দলের অভিজ্ঞতম এই ব্যাটসম্যান। বার কয়েক হাত দিয়ে চোখ মুছলেন। কিছুতেই কান্না বন্ধ করতে পারছিলেন না। সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হলেন সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে, চোখ তখনও টকটকে লাল।
চোখে পানি নিয়েই টেলর খোলাসা করলেন কারণটা। নিউজিল্যান্ডের প্রয়াত ব্যাটিং গ্রেট মার্টিন ক্রো ছিলেন তার গুরু। যিনি আবার টেলরকে পরিচয় দিতেন নিজের ছেলে হিসেবে। সেই ‘বাবা’র কথা মনে হতেই কান্না আটকে রাখতে পারলেন না টেস্টে কিউইদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
মার্টিন ক্রো ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত। প্রাণঘাতী এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ২০১৬ সালে পরপারে পারি জমান। সেই ক্রো-ই টেস্ট ক্যারিয়ারটা বদলে দিয়েছিলেন টেলরের। আজ তিনি নেই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিংকে ছাড়িয়ে টেস্টে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার পর সেই গুরুর কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন টেলর।
বার কয়েক কান্না চেপে সংবাদ সম্মেলনে গুরুকে নিয়ে টেলর বলছিলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল একটি টেস্ট ম্যাচ খেলার। আসলে আমি আবেগী হয়ে পড়েছি আমার গুরু মার্টিন ক্রোর কথা মনে হতেই। তিনিই আমার লক্ষ্য বদলে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন-আমাকে তিনি টেস্টে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে দেখতে চান। সত্যি করে বলতে আমি কখনও এটা বিশ্বাসই করতাম না। তার ভালোবাসাই আমাকে এখানে এনেছে, আজ আমি উদযাপন করতে পারছি।’
সিডনি টেস্টে ব্যক্তিগত ২১ রান পার করতেই ফ্লেমিংয়ের ৭১৭২ রানের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন টেলর। সতীর্থরা দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান। অভিনন্দন জানান প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের খেলোয়াড়রাও।
সংবাদ সম্মেলনে টেলর বলছিলেন, ‘আমি যখন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা শুরু করি, আমার ভালো একটা ওয়ানডে ক্যারিয়ার গড়ে উঠছিল। তখন আমার মাত্র তিনটি বা চারটি প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও তখন সবে শুরু হয়েছে। আমি সবসময় নিজেকে ভালো ওয়ানডে খেলোয়াড় ভাবতাম, কিন্তু টেস্টে আমি নিজেকে ততটা ভালো মনে করতাম না। এজন্য মার্টিন ক্রোর কাছে গিয়েছিলাম।’
গুরুর কথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন টেলর। কিছুতেই যেন মানতে পারছিলেন, তার এমন সাফল্যের দিনে সেই বদলে দেয়ার কারিগরটি নেই। বার কয়েক চোখ মুছেও কান্না আটকে রাখতে পারেননি টেলর।