ইরান ঘোষণা করেছে যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তার কোনটিই তারা আর মেনে চলবে না।
জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরানের মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এটি এমনিতেই খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। ইরানের এই ঘোষণার পর এই চুক্তি ভেঙ্গে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের আশংকার মধ্যে অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, ইরান কি তাহলে এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে হাত দিতে চলেছে? যদি তারা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি চালাতে থাকে, তাহলে কত দ্রুত তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে?
ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে না পারে, সেজন্যেই তাদের সঙ্গে চুক্তিটি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো।
প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে সম্পাদিত চুক্তিটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় একটি 'বাজে চুক্তি' বলে বর্ণনা করে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে এখনো এই চুক্তির গুরুত্ব আছে।
এই পরমাণু চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক তদারকিতে রাখা। ইরান দাবি করে যে তারা শান্তিপূর্ণ কাজেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করতে চায়।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের শংকা আরও বাড়ছে
কিন্তু পরমাণু চুক্তিটির সবচেয়ে বড় গুরুত্ব ছিল- এটি মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের শঙ্কা দূর করেছিল। এই চুক্তির আগে এমন আশংকা ছিল যে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঠেকানোর নামে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন এই চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে বেরিয়ে গেল, তারপর থেকে ইরান ক্রমাগত এই চুক্তিতে আরোপ করা কিছু বিধিনিষেধ ভঙ্গ করে চলেছে।
কিন্তু জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর যে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ইরান এখন মনে হচ্ছে সব বিধিনিষেধই উপেক্ষা করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান এখন তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? যেমন ধরা যাক, তারা কি ইউরেনিয়াম পরিশোধন ২০ শতাংশের উপরে নিয়ে যাবে?
ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা বাড়িয়ে পরমাণু অস্ত্রের উপকরণ পেতে ইরানের সময় লাগবে বড়জোর একবছর
পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইরান যদি এখন সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে, তাহলে বোমা তৈরির উপকরণ পেতে তাদের অনেক কম সময় লাগবে। কিন্তু ইরান কি এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের তদারকির বর্তমান ব্যবস্থা মেনে চলবে?