ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আজ অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর সফরে যাচ্ছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। দুই দিনের এই সফরে তার সঙ্গে থাকছে।
ইউরোপের এক কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরে তারা কোনও সরকার সমর্থিত বা‘গাইডেড সফর’ চান না। তারা সেখানে নিজেদের ইচ্ছেমতো লোকজনদের সঙ্গে কথা বলতে চান। এ কারণে ভারত সরকারের কাশ্মীর সফরের এই আমন্ত্রণে তারা রাজি হননি।
তবে ভারতের সরকারি সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরে সফরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এটা খুবই কম সময়ের ব্যবধানে হচ্ছে। তারা পরে অন্য কোনও দিনে কাশ্মীর সফরে যাবেন। এসময় তারা জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতির ‘ব্যপক উন্নতি’হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বলে জানাচ্ছেন ওই ভারতীয় সূত্রটি।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বা ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি ভাগে বিভক্ত করার তিনমাস পর গত অক্টোবরে সেখানে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একদল সাংসদ। যদিও সেটা ইইউ’র কোনো স্বীকৃত সফর ছিলো না। আর ওই প্রতিনিধি দলে মুসলিম বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিদেরই অন্তর্ভুক্ত করেছিল মোদি সরকার। তখন এ সফর নিয়ে খোদ ভারতেই নানা সমালোচনা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে অনেকটা একইরকম সফরে যাচ্ছে ১৭ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি। এই সফরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতছাড়াও ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতসহ মোট ১৭ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এই সফরে অস্ট্রেলিয়া ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের একাধিক দেশের প্রতিনিধিদের থাকার কথা থাকলেও পরে তারা সেটি বাতিল করেন। এছাড়া এই ধরনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সফরে যেতে আগ্রহী হননি ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাষ্ট্রদূত এনডিটিভি’কে বলেন, ‘কাশ্মীরে গাইডেড সফর চান না ইউরোপিয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা। আমরা সেখানে নিজেদের ইচ্ছেমতো মানুষদের সঙ্গে কথা বলব।’
শুধু তাই নয়, কাশ্মীর সফরকালে ইইউ রাষ্ট্রদূতরা কাশ্মীরের জেলবন্দি তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা, এবং মেহবুবা মুফতির সঙ্গেও কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্বাভাবাকিভাবেই তাতে রাজি নয় মোদি সরকার। নয়াদিল্লী বিদেশি প্রতিনিধিদের সেটুকুই দেখাতে চান,যেটুকে দেখালে তারা কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে পারেন। কাশ্মীর নিয়ে বিদেশিদের সমালোচনার জবাবে নয়াদিল্লি বারবার বলে আসছে, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক’। তাই তারা কখনই কাশ্মীরের প্রকৃত অবস্থা বাইরের লোকজনকে জানাতে দিতে চায় না।
এমনকি ভারতের বিরোধী দলীয় নেতাদের পর্যন্ত কাশ্মীর সফরের অনুমতি দিচ্ছে না মোদি সরকার। অন্যদিকে বিদেশি প্রতিনিধিদের এনে সেখানে ‘গাইডেড সফর’ করাচ্ছে নয়াদিল্লি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট হঠাৎ করেই কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর আগের দিন রাতেই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিসহ কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়। এরপর ওই রাজ্যে অনির্দিষ্ট কালেল জন্য কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সেখানকার টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা। তখন চারদিকথেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত বন্দি জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় কাশ্মীরের বাসিন্দারা। সম্প্রতি সেখানে সীমিত আকারে টেলিফোন ও ইন্টারনেট চালু হলেও বিশেষ মর্যাদা বাতিল নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসছে কাশ্মীরিরা।