আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে তার ছক্কা মাত্র ৪টি, ৩২ ম্যাচে ব্যাট হাতে রানও সাকুল্যে ৮৩। তবে যেদিন প্রয়োজন পড়লো দলের, সেদিনই যেনো সবচেয়ে মূল্যবান ছক্কাটি হাঁকালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি পেসার শেলডন কটরেল। তার এক ছক্কাতেই শেষ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচ বছরের অপেক্ষা।
তার কাজ মূলত বোলিং, এ ম্যাচেও ৫১ রান খরচায় নিয়েছেন ৩টি উইকেট। ব্যাট হাতে তিনি দল জেতাবেন, এমন আশা হয়তো ঘোর সমর্থকরাও করেন না। সেই কটরেলই ছক্কা মেরে নিশ্চিত করেছেন দলের জয়। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান ছক্কা মেরে নিশ্চিত করলো দলের জয়।
অবশ্য কটরেলের ছক্কার চেয়েও ম্যাচ জয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে হবে ডানহাতি পেসার আলঝারি জোসেফকে। বল হাতে মাত্র ৩২ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর, ব্যাট হাতেও খেলেছেন ২৬ বলে ১৬ রানের কার্যকরী ইনিংস। সঙ্গে ছিলো নিকলাস পুরান, কাইরন পোলার্ড ও হেইডেন ওয়ালশদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আর এতে করেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়। ঘরের মাঠে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জেতার পর, এটিই ক্যারিবীয়দের প্রথম সিরিজ জয়। এছাড়া প্রায় ৪ বছর পর ঘরের মাঠে পরপর দুইটি ওয়ানডে জিতল কাইরন পোলার্ডের দল।
বার্বাডোজের কেনিংটন ওভালে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান করতে পেরেছিল আয়ারল্যান্ড। জবাবে বেশ ঘামই ঝরাতে হয়েছে ক্যারিবীয়দের। পুরানের ফিফটি, পোলার্ডের কার্যকরী ইনিংসের পরেও পরাজয়ের শঙ্কা জেগেছিল। তবে হেইডেন ওয়ালশ দায়িত্ব নিয়ে শেষ করেন ম্যাচ। আর শেষে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন কটরেল।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটাই বেশ বাজে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দলীয় ২৪ রানেই সাজঘরে ফিরে যান এভিন লুইস (৭), শিমরন হেটমায়ার (৬) ও ব্রেন্ডন কিং (০)। প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন শাই হোপ ও নিকলাস পুরান। কিন্তু হোপ নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি, দলীয় ৭৬ রানের সময় আউট হন ২৫ রান করে।
তবে পুরান অপরপ্রান্ত আগলে তুলে নেন ফিফটি, সঙ্গ দেন অধিনায়ক পোলার্ড। ফিফটি পেরিয়ে আবার বেশিদূর যেতে পারেননি পুরান। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৫২ রান করেন তিনি। পোলার্ডও ফিরে যান পরের ওভারেই, খেলেন ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংস।
তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৪২ রান। জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে আইরিশরা। সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে ১৪৮ রানে। এরপর প্রতিরোধ গড়েন ওয়ালশ, জোসেফ ও পিয়েরেরা। অষ্টম উইকেটে ওয়ালশ ও পিয়েরের ৫২ রানের জুটিটাই যেনো ঠিক করে দেয় ম্যাচের ফল। পিয়েরে আউট হন ১৮ রান করে।
এরপর জোসেফকে নিয়ে ৩২ রানের জুটি গড়েন দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ওয়ালশ। কিন্তু মাত্র ৬ রান বাকি থাকতে জোসেফ ফিরে গেলে ফের উন্মুক্ত হয়ে যায় ম্যাচ। ৪৯তম ওভারে মাত্র ১ রান খরচ করে ক্যারিবীয়দের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন।
যার ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৫ রান বাকি থেকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মার্ক এডায়ারের করা সে ওভারের প্রথম চার বলে ৩টি সিঙ্গেল নেন কটরেল ও ওয়ালশ। তৃতীয় বলে রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যান কটরেল। পরে সেই কটরেলই পঞ্চম বলে সুইপার কভার দিয়ে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
এর আগে পল স্টার্লিংয়ের ফিফটির পরেও আলঝারি জোসেফ ও কটরেলের তোপে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি আইরিশরা। ওপেনার স্টার্লিংয়ের ৭৯ বলে ৬৩ ছাড়া উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ৪৬ বলে ২৯, কেভিন ও'ব্রায়েন ২৬ বলে ৩১ ও সিমি সিং খেলেন ৫০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস।
ক্যারিবীয়দের পক্ষে বল হাতে ৩২ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন জোসেফ, ৫১ রানের বিনিময়ে কটরেল নেন ৩টি উইকেট।