কথা হচ্ছিলো তার নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে, আলোচনা চলছিলো কবে অবসর নেবেন জাতীয় দল থেকে কিংবা এখনও জাতীয় দলের জন্য নিজেকে এভেইলেবল মনে করেন কি না। এ বিষয়ে সবিস্তরে উত্তর দিলেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের। জানালেন অবসর কিংবা জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে নিজের অবস্থানের ব্যাপারে।
এ সময় পারফরম্যান্স বিষয়ক আলোচনায় মোড় ঘুরতেই মাশরাফি বিন মর্তুজার চোখ-মুখ যেন খানিক শক্ত হয়ে গেল। বিশ্বকাপে নিজের বাজে পারফরম্যান্সের উদাহরণ টেনে এনেই তিনি চলে গেলেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের প্রসঙ্গে। বিপিএলের প্রসঙ্গ ভুলে মাশরাফি যেন হয়ে উঠলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক।
যোগ্য অধিনায়কের মতোই নিজে আগলে রাখার চেষ্টা করলেন মোস্তাফিজকে, অন্যদেরও পরামর্শ দিলেন মোস্তাফিজের ওপর থেকে বাড়তি চাপ সরিয়ে নেয়ার। শুধু তাই নয়, নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে কোনো ক্রিকেটারের ব্যাপারে সরাসরি সমালোচনা বা নেতিবাচক কথা বলা উচিৎ নয় বলেও জানিয়ে দেন মাশরাফি।
সংবাদ সম্মেলনটা মূলত ছিলো বিপিএলে ঢাকা প্লাটুন ও রংপুর রেঞ্জার্সের মধ্যকার ম্যাচ ঘিরে। তবে সেখানে যখন চলে আসেন মাশরাফি নিজে, তখন শুধু বিপিএল প্রসঙ্গেই থেমে থাকে না আলোচনা, কথা হয় জাতীয় দলসহ দেশের ক্রিকেট নিয়েই। সে ধারাবাহিকতায়ই আজকের (শুক্রবার) সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজসহ তরুণ বোলারদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্য কী করণীয় সেটিও বলেন মাশরাফি।
গত বছরের লম্বা একটা সময় মোস্তাফিজকে নিয়ে হয়েছে নানান সমালোচনা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২০ উইকেট পেলেও ইকোনমি এবং বোলিংয়ের ধার নিয়েও প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়েছেন মোস্তাফিজ। এমনকি জাতীয় দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকেও সংবাদমাধ্যমে খোলামেলা সমালোচনা করা হয়েছে বাঁহাতি এ পেসারের। একজন ক্রিকেটারের জন্য এসব ঠিক নয় বলে মনে করেন মাশরাফি।
দেয়ার পর স্বউদ্যোগী হয়েই টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, ‘উনারাও (যারা নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আছে) পারফরম্যান্সের বিষয়ে ভাববে, তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। যে কথাটা আমি মোস্তাফিজের ক্ষেত্রেও বলি সবসময়। মোস্তাফিজকে যত্ন করা খুবই জরুরী। আমরা (ক্রিকেটার ও নীতিনির্ধারক) যদি মোস্তাফিজের শুধু সমালোচনাই করতে থাকি... আপনাদের (সাংবাদিক ও দর্শক) কথা আলাদা, প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দর্শক, সাংবাদিকরা পারফরম্যান্স না থাকলে সমালোচনা করবেই। কিন্তু আমি যখন মোস্তাফিজের দায়িত্বে আছি, তখন কেন আমি মোস্তাফিজকে নিয়ে আপনাদের সামনে এসে সমালোচনা করবো? তখন তো মোস্তাফিজকে আরও আগলে রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।’
এ সময় অর্ধেক মোস্তাফিজও বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক প্রয়োজন উল্লেখ করেন মাশরাফি। এমনকি তার মতে, এখন মোস্তাফিজের অর্ধেক মানের কেউও জাতীয় দলের আশপাশে নেই। তাই বাঁহাতি এই পেসারকে মানসিকভাবে আরও সমর্থন দেয়ার কথা বলেন মাশরাফি।
মাশরাফি বলেন, ‘যদি অর্ধেক মোস্তাফিজও বাংলাদেশ দলের থাকে, তাহলে আমি মনে করি যথেষ্ট। আমাকে একটা অর্ধেক মোস্তাফিজই দেখান বাংলাদেশে। আছে? যদি থাকে আমাকে দেখান। সেটা নেই। তাহলে আমরা যারা মোস্তাফিজকে তৈরি করতে চাচ্ছি, তারা কেন (সমালোচনা করছি?)... মোস্তাফিজ তো বিশ্বকাপে ২১ উইকেট (আসলে ২০) পেয়ে এসেছে, হয়তো ইকোনমি বা অন্য কিছু নিয়ে কথা থাকতে পারে। কিন্তু এই জিনিসটা ঠিক করার একটা পথ আছে। পৃথিবীর অনেক বোলার আছে যারা ফর্মহীনতায় ভুগেছে আবার কামব্যাক করেছে। আমাদের দেশে কেন হচ্ছে না?’
নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘কারণ মোস্তাফিজকে নিয়ে যারা কাজ করছে মাঠে, তারাও কিন্তু আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে আপনাদের মতো করেই কথা বলছে। মানুষ যেটা বলছে, বাইরে যেটা শুনছে- সেটাই মোস্তাফিজের ব্যাপারে তারাও বলছে। এখানে নিজস্ব চিন্তাভাবনাটা কই যে- আমি মোস্তাফিজকে ঠিক করবো। আপনাদের সামনে মোস্তাফিজকে নিয়ে সমালোচনা করে, পরদিনই আবার মোস্তাফিজকে নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি! তো, মোস্তাফিজ কি মানুষ না? সে তার মনের সমস্যা তার সঙ্গে আর কিভাবে শেয়ার করবে? কারণ আপনি ২৪ ঘণ্টা আগেই মোস্তাফিজের সমালোচনা করে এসেছেন।’
খেলোয়াড়দের মানসিক দিকটা ঠিক রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে, এসব খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে অনেক বুস্টআপ করার প্রয়োজন আছে। যেটা এখন হচ্ছে না বলেই আমার মনে হচ্ছে। আর যেসব বোলার উঠে আসছে, তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত করতে হবে তারা আরও ওপরে কিভাবে যেতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সবার মতো উনারাও গা ভাসিয়ে দিলে বাংলাদেশের ক্রিকেট এভাবেই চলবে।’